[মতিউল ইসলামকে স্মরণে রেখে]
বার্ধক্যের ভগ্ন স্বর, মাঝে-মধ্যে শ্বাসকষ্ট, কখনো আবার
পিত্তশূল, আর কখনো-বা মনোভার
নিয়ে কাটিয়েছো বেলা।
কখনো কি হয়েছে সংশিত সাধ ভেলা
ভাসাতে অলক্ষ্যে রাতে তিতাসের জলে? কিংবা ঘুম
ভেঙে গেলে কোকিলের আহ্বানে নিঝুম
হয়েছে কি মনে
পৃথিবীকে বড় বেশি? হঠাৎ গোপনে
খুলেছিলে কবিতার ধূলিম্লান খাতা? কত কথা
দিয়েছিল উঁকি মনে, শিউরে উঠলে দেখে মরুর শূন্যতা।
একদা সুদূর ঝাঁঝাঁ যৌবনের উদ্দাম আবেগে
যেসব সুন্দরী তুমি দেখেছিলে বারবার ভাসমান মেঘে,
বনের কিনারে,
ডাগর নদীর ঢেউয়ে, লতাঘেরা পাখি-ঝলসিত ঝোপঝাড়ে,
যাদের বুকের উপত্যকা
তোমার হৃদয়ে বিলিয়েছে পুষ্পঘ্রাণ, পলাতকা
অকস্মাৎ তারা সেই কবে
উধাও সৌরভে
স্মৃতির প্রচ্ছায়া রেখে। যে-স্বপ্ন তোমার চিদাকাশে
ক্ষণে ক্ষণে বীতখেদ কুসুমের মাসে
স্মরণাতীতের অলো
জ্বেলেছিল, সে-ও হায়, ছায়ার মতোই ধু-ধু ছায়ায় মিলালো।
মাঝে-মাঝে আমার সংশয়ী মনে জাগে
এক প্রশ্ন, অস্বস্তির কাঁটাবেঁধা-তোমার অন্তরে অস্তরাগে
দুরুহ টানেনি, বুঝি তাই
যার পর নাই
সহজিয়া অধ্যাত্মবাদের আমন্ত্রণী মরীচিকা
জ্বেলেছিলো শিখা
তোমার বিহবল চোখে, নাকি
অন্য কোনো ফাঁকি
তোমাকে ভুলিয়ে অন্য পথে ছন্দমবেশী ঠিকানার
দিলো খোঁজ আর
মনে পড়ে
অত্যন্ত ঝিমিয়ে-পড়া পাখির মতন দ্বিপ্রহরে
প্রগাঢ় বলেছিলে দূর বনান্তের স্তব্ধতায়-
সমাধিফলক ছুঁয়ে ফড়িং এবং প্রজাপতি উড়ে যায়।
(অবিরল জলভ্রমি কাব্যগ্রন্থ)