জীবনকে তুখোড় যদি সারাক্ষণ
মাতলামো করি আর শরীর গাঁজার গন্ধে ভরে
ছট করে চলে যাই সাঙাতের ফুর্তিবাজ রকে,
পাপকে হৃদয়গ্রাহী করে তুলি হ্রদের আলোর
মতো যদি উৎপীড়িত অন্ধকারে, ঘেয়ো ভিখিরির
ছেঁড়া ন্যাকড়ার ভাঁজে নক্ষত্রের ছায়া দেখি যদি
অথবা স্বপ্নের ঠাণ্ডা হরিণকে কাঁধে নিয়ে, ওহে,
কোথাও অলক্ষ্যে স’রে পড়ি, কনে-দেখা আলো সাক্ষী
রেখে বড়বাবু পৃথিবীকে একটা সালাম ঠুকে
হো-হো হেসে উঠি অতর্কিতে বদরাগী উর্দি দেখে,
তবে কি বেল্লিক ভেবে সরাসরি দেবে নির্বাসন
চিরতরে অথবা লেখাবে দাসখৎ শোকাবহ
আত্মার সাক্ষাতে? যাই করো, চিরদিন আমি তবু
থাকব অনড় সাক্ষী তোমাদের কাপুরুষতার।
জানি যারা দেখতে চায় নিষ্কলুষ জ্যোৎস্নার সারস
ঘুমেভরা ডানা দুটি গুটিয়ে রয়েছে ব’সে ভাঙা
দেয়ালের মস্ত বড় হাঁয়ের ভেতর, দেখতে চায়
বয়স্কের তোবড়ানো গালের মতন অতীতের
ধসে কয়েকটি ক্লান্ত নর্তকী ঘুঙুর নিয়ে করে
নাড়াচাড়া, যারা দেখতে চায় ঝাড়লণ্ঠনের নিচে
মোহিনী সৌন্দর্য আবর্তিত কুৎসিতের আলিঙ্গনে
রাত্রির স্খলিত গালিচায়, ফেলেনি নোঙর তারা
কোনো দিন বণিকের জ্বলজ্বলে সম্পন্ন বন্দরে।
নির্বাসন দাও যদি জনহীন অসহ্য সৈকতে,
নিহত আত্মার শোকে করব না কখনো বিলাপ।
বরং নির্মেষ মনে হাত-পা ছড়িয়ে অবিচল
দুর্দশার প্রহার গ্রহণযোগ্য করে দেখব সে
ডানপিটে সূর্যটাও সহসা উধাও অন্ধকার
বনে; নিশাচর বেদে চাঁদের প্রসন্ন মুখে পাখা
ঝাপটায় ঢাউস বাদুড়, ছিঁড়ে ফেলে শুভ্রতাকে।
কখনো দেখব স্নপ্ন-কয়েকটি জলদস্যু যেন
অবলীলাক্রমে কাটা মুণ্ডুর চামড়া নিচ্ছে তুলে
অব্যর্থ ছোরার হিংস্রতায়, গড়ায় মদের পিপে
রক্তিম বালিতে আর বর্বর উল্লাসে চতুর্দিকে
কম্পিত পাতার মতো শব্দের ধমকে। কখনোবা
হঠাৎ দেখব জেগে শুয়ে আছি হাত-পা ছড়ানো
বিকেলের সাথে নামহীন কবরের হল্দে ঘাসে,
দেখব অঢেল রৌদ্রে ঝল্সে উঠে ঝরায় চুম্বন
ওষ্ঠহীন করোটিতে, জানব না সে করোটি কার,
সম্রাট অথবা ভাঁড় যার হোক আমি শুধু একা
দেখব রৌদ্রের খেলা একটি নির্মোহ করোটির
তমসায় দেখব কে ছুঁয়ে যায় কালের বুড়িকে।
(রৌদ্র করোটিতে কাব্যগ্রন্থ)