কী-যে হলো, কিছুদিন থেকে
আমার পড়ার ঘরে আজগুবি সব দৃশ্য জন্ম
নেয় চারদেয়ালে এবং
বইয়ের শেল্‌ফে, এলোমেলো, প্রিয় লেখার টেবিলে।

কতবার গোছাই টেবিল
সযত্নে, অথচ ফের কেন যেন হিজিবিজি অক্ষরের মতো
কেমন বেঢপ রূপ হয়ে
আমাকে সোৎসাহে ভ্যাঙচায় লেখার সময়।

ওরা কি আমার রচনার
পরিণাম বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে কলম থামাতে চায় এই
অধমের? লুকাবো না, আমি
ভীত চিত্তে কলম থামিয়ে দূরে দৃষ্টি মেলে দিই।

আচমকা কতিপয় দীর্ঘদেহী প্রেত
লেখার টেবিল ঘিরে ধেই ধেই নেচে আমাকেই
বিদ্রূপের কাদায় সজোরে ঠেলে দিয়ে
দন্তহীন ভয়ঙ্কর মুখে ক্রূর হাসি হাসে!


কোত্থেকে ঘরে ভুতুড়ে আঁধার ঢুকেছে হঠাৎ,
ভেবেই পাই না। আঁধার এমন দংশনপ্রিয়
হতে পারে, আগে জানতে পারিনি। নিজ হাতকেই
কেমন অচেনা বলে মনে হয়। ভয়ে কেঁপে উঠি।

ভয় তাড়ানোর চেষ্টায় দ্রুত চড়িয়ে গলার
ধ্বনি এলোমেলো কীসব আউড়ে গেলাম কেবল।
আকাশে এখন চাঁদ আর তারা দেবে না কি উঁকি?
কেউ কি আমার গলা চেপে ধ’রে করবে হনন?

কারা যেন ছুটে আসছে এদিকে। ওরা কি দস্যু?
নাকি আগামীর ঘটনাবলির বেঢপ আভাস?
হঠাৎ আমাকে ভগ্ন বাড়ির স্তূপের ভেতর
কাতরাতে দেখি। কিছু ধেড়ে পোকা চাটছে জখম।

আমার দেশের চারদিক জুড়ে ক্রূদ্ধ পানির
দংশনে আজ পাড়া গাঁ এবং শহর কাতর।
ভয় হয় যদি হঠাৎ প্লাবন বাড়িঘর সব
মানুষ সমেত ঘোর বিরানায় মুছে ফেলে দেয়।


এখন কোথায় আমি? কে আমাকে এই
নিঝুম বেলায় বলে দেবে? এখানে তো ডানে-বামে
জনমানুষের চিহ্ন নেই। বড় বেশি শূন্যতার
হাহাকার অস্তিত্বকে নেউলের মতো
কামড়াচ্ছে সারাক্ষণ। ভাবছি, এখন যদি কোনও
কুশ্রী মানবেরও পদধ্বনি শুনি বড় ভালো হয়।

কখনও হতাশা যেন সমাজকে, দেশকে বিপথে
টেনে নিয়ে অন্ধের আসরে
আরও বেশি অন্ধ, বোবা জমা ক’রে ঘন ঘন জোরে
করতালি দিয়ে আরও বেশি জম্পেশ আসর না বসায়।

আজকের এই বোবা অন্ধকার লুটপাট আর
অস্ত্রবাজি, আমার বিশ্বাস, আগামীর
সকালে, দুপুরে, রাতে পারবে না মাথা তুলে দাঁড়াতে নিশ্চিত,
যখন স্বদেশ রক্তগোলাপের মতো প্রস্ফুটিত।

   (গোরস্থানে কোকিলের করুণ আহবান কাব্যগ্রন্থ)