অক্ষর সাজিয়ে আমি অক্ষরের রূপে মজে আছি
সারা দিনমান আজো, কত নিদ্রাহীন রাত কাটে
প্রতিমা বানিয়ে অক্ষরের। ক্যালেন্ডারময় শাদা
দেয়ালের মুখোমুখি বসে থাকি প্রহরে প্রহরে।
কখনো হঠাৎ, যেন বিদ্যুতের স্পর্শে বিচলিত,
দাঁড়াই সটান ঘুরে। দেখেছি কি হরিণের লাফ,
অথবা চিতার দৌড় নাকি বলেভিয়ার জঙ্গলে
যে গুয়েভারার কাদামাখা হাত, অস্ত্রহীন, একা,
চির অস্তাচলে! বুঝি তাই বহু দেশে এখনো তো
হয়নি প্রকৃত সুর্যোদয়; স্বাধীনতা ফাঁসিকাঠে
ঝোলে দিকে দিএক, পিঠে চাবুকের কালশিটে
দাগ নিয়ে কুঁজো হয়ে পথ হাঁটে আহত বিবেক।
অক্ষর সাজিয়ে আমি, মনে হয়, রৌদেজ্যোৎস্নাময়
স্বাস্থ্যনিবাসের মতো কি একটা স্থাপন করেছি
আমার নিজের বাম পাশে। যে যাই বলুক আজ
এমন কন্টকময় পথে সোজা শিরদাঁড়া আর
যিশুর চোখের মতো গৌরবের আভাই সম্বল
আমার এবং দ্রুত শ্মশানের আগুন নেভাই।
অনেক সুন্দর নৌকো গহীন নদীর চোরা টানে
দূর নিরুদ্দেশে ভেসে যায়, দেখেছি কি দেয়ালের
শূন্য বুকে? মাঝে-মধ্যে নাগলতা আমাকে জড়িয়ে
ধরে আর অন্ধকারে স্বপ্নের মতই নিরিবিলি
আলখাল্লা কম্পমান। ‘আয় তুই আমার হৃদয়ে’
ব’লে গাঢ় কণ্ঠস্বর আমাকে স্বপ্নের শুভ্রতায়
ডাকেন মৌলানা রুমি নাকি হো চি মিন, বোঝা দায়;
স্বপ্নে কিছু স্পষ্ট কিছু অত্যন্ত অস্পষ্ট থেকে যায়।
(ইকারুসের আকাশ কাব্যগ্রন্থ)