আবার সেখানে তুমি হুবহু আগের মতো সব
পেয়ে যাবে, এরকম ভাবা ঠিক নয়। বহু পথ পাড়ি দিয়ে
অখ্যাত স্টেশনে নেমে খানিক জিরিয়ে
হেঁটে যাবে, তারপর উঠবে নৌকায়, পালে হাওয়া
লাগবে, মেঘনার বুক চিরে,
যাবে তুমি বহুদূরে ভাটিয়ালি টানে।
ধান-রঙ অপরাহ্নে আলুঘাটা পৌঁছে
শহুরে পা রেখে ভেজা মাটিতে এবং
দৃর্ষ্টি মেলে গাছগাছালির ভিড়ে, ছনছাওয়া ঘরে
কী তুমি প্রত্যাশা করো আজ?
কৈশোর ও যৌবনের মাঝখানে থমকে দাঁড়ানো
সেই মেয়ে আসবে কি ছুটে
শাড়ির কোঁচড়ে তার একরাশ বৈঁচি ফল নিয়ে?
কিংবা সে কিশোর, যাতে তুমি
এই তো সেদিন ভরা শ্রাবণের নিঝুম ধারায়
কী ব্যাকুল ছুঁয়ে
পরখ করতে চেয়েছিলে সে প্রকৃত
সজীব প্রতিভূ কিনা বাস্তবের, সেও কি আবার
তোমার সতৃষ্ণ বুকে পড়বে ঝাঁপিয়ে
নিরাশ্রয় পাখির ধরনে?
বাঁশঝাড় পেরুনোর সময় তোমার
পড়বে কি মনে কত উদাস দুপুরে
পাখির ডিমের লোভে ক’জন বালক দিতো হানা জরাগ্রস্ত
কাচারি বাড়ির আশেপাশে থমথমে সান্নাটায়?
পড়বে কি মনে পূর্ণিমায় পুরনো পুকুর পাড়ে ঢ্যাঙা নাঙা
ফকিরের নিসর্গ-মাতানো নাচ? মধ্যরাতে বৈঠকখানায়
মাইজভাণ্ডারি গান?
পড়বে কি মনে সেই দৃশ্যবলি, খুব ছলছলে
হাল-আমলের গ্রামভিত্তিক বঙ্গীয় উপন্যাসে
যে রকম থাকে?
কষ্ট দেয় প্রাচীনতা বড় কষ্ট দেয়, ভাবো তুমি,
দরবারি কানাড়ার মতো। ত্রস্ত খরগোশ ঝোপ
থেকে ঝোপান্তরে ছুটে যাবে, ঝরবে পায়ের কাছে
আম জাম কাঁঠালের পাতা, দাওয়ায় দাঁড়ানো কেউ
উঁকি দেবে, ধরা যাক। পাখি
চকিতে উঠবে ডেকে সন্ধ্যাকে চমকে দিয়ে খুব।
হয়তো সেখানে গিয়ে দেখবে আগের মতো নেই
কোনো কিছু, হয়তো বা কোনো চোখের অনাশ্রয়
তোমাকে ফিরিয়ে দেবে শূন্য নদীতীরে, তবু অনিচ্ছা সত্ত্বেও
আজ হোক কাল হোক তোমাকে যেতেই হবে সুদূর সেখানে।
(হোমারের স্বপ্নময় হাত কাব্যগ্রন্থ)