মশারির ঘেরাটোপে চোখ মেলে দেখি-
অন্ধকার সরে যাচ্ছে, যেন
জেলে আস্তে সুস্থে তার জাল
ক্রমশ গুটিয়ে নিচ্ছে খুব
নিরিবিলি; একটি কি দুটি পাখি ডাকে,
নারকেল গাছের পাতার ঝিলিমিলি,
মেঝেতে গড়ায় প্রজাপতি, মরা; হাওয়া,
বাথরুমে গেলে নিলবে তো
পানি? যাই। প্রতিবেশী বাড়ির জানলা
খোলা, হলদে পর্দা নড়ে
এবং আমার ঘরে ওড়ে কত পদাবলী নানান যুগের,
দেয়ালে দেয়ালে, বারান্দায়
সকালবেলার স্বাধিকার।
বাজলো কলিং বেল, দরজাটা খোলো।
খবরের কাগজের চেনা গন্ধ, আসছে পাশের
ঘর থেকে
চায়ের সোনালি ঘ্রাণ, টোস্টার সেঁকছে
ঈষৎ বাদামি রুটি; লেখার টেবিলে
বসে আছি, শুক্রবাসরীয়
পাতায় বন্ধুর কবিতার দ্যুতি, খরার বাত্তিরে
বিদ্যুল্লতা, তাঁর
সঙ্গে কাল ফোনে হয়েছিল কিছু কথা,
সে-কথায় অসমান্য ঝলক লাগেনি,
তিনি কি লেখেন সত্যি, নাকি অন্য কেউ,
অন্তর্গত, গোপনে জপায়
তাঁকে অলৌকিক
তস্বিদানার মতো অক্ষরের মালা?
খরায় লেখনী তাঁর হোক
অন্নপূর্ণ; খাবারের প্লেট,
কানায় কানায় ভরা হাতে
এলেন গৃহিণী, চলে যাই একা-একা
মায়া কাননের দিকে।
তাকেই কি বলে কেউ ইদানীং অজানা স্টেশন
রহস্যের কুয়াশায় মোড়া?
মোটর কারের হর্ণ, গলি
শকুন্তলা, চমকে তাকায়, যায় সুটকেস আর
সামান্য সম্বল নিয়ে একজন রিকশায়, গিটার
হাতে; মুটে বয় সব্জিময় ঝাঁকা, হাঁকে মাঠা-অলা।
কবেকার নির্ঝরের গান লীলায়িত
সমগ্র সত্তায় অকস্মাৎ
মনে হয়-কয়েক শতাব্দী আগে ছিলাম কুটিরে
পদকর্তা মাঝে-মধ্যে অর্ধাহারে অথচ হৃদয়ে
উঠতো বেজে যখন তখন অনন্তের সুর, ছুটে
যেতাম রোদ্দুরে পুড়ে নীলাম্বরী শাড়ি-পরা সেই
গৌরী ধোপানীর ঘাটে। তার অঞ্জলিতে
ওষ্ঠ রেখে ব্রাত্যের দূরত্ব মুছে ফেলে
আমার তৃষ্ণার জল করতাম পান,
অমরতা নিয়েছিল দত্তক আমাকে।
(অবিরল জলভ্রমি কাব্যগ্রন্থ)