যখন তোমার বাহুর বাসরে
মগ্ন ছিলাম চন্দ্রিত চন্দ্রায়,
আলো-আঁধারির চকিত সীমায়,
লালনের গান দূর হতে এলো ভেসে।
সে গানের ধ্বনি স্তব্ধ সায়রে
ফোটায় নিবিড় অজস্র শতদল।
ধুলোয় উধাও সে গানের কলি
গ্রামছাড়া পথে মনের মানুষ খোঁজে।
শৈশব-গাঁথা জামতলা আর
কনক দুপুরে শ্রাবণ দিঘির ডুব,
ঘোরলাগা ভোর, অভিজ্ঞ সাঁঝ-
সবি আছে বুঝি স্মৃতির অভ্রে ডুবে।
কে আসে ঘাসের স্তব্ধ সবুজে
নীরবে নগ্ন শুভ্র চরণ ফেলে?
সে-যে সেই গান স্পন্দনে যার
আঁধারেও চির মনের মুকুল জ্বলে।
অবচেতনার গহন ধারায়
তারাময় মনে জাগে স্বপ্নের পলি।
একটি চাঁপার বিন্দুতে মেশে
সব দ্বন্দ্বের ঘূর্ণিত অবসান।
সে গানের সুর জীবনে ঝরায়
জুঁই-চামেলির অরূপ সুরভি আজও
অস্তরাগের ধ্যানী বাসনায়
জ্বলে ওঠে ক্কীণ দীপ্ত চন্দ্রকলা।
কাল মন্থনে চেতনায় জাগে
অতীতের দ্বীপ, স্মৃতির প্রবালে লাল।
বর্তমানের মুক্ত আধারে
ভবিষ্যতের দীপাবলি ওঠে ভেসে।
সে-গানের ধ্বনি ফিরে ফিরে আসে
মর্ত্যজীবীর রঙিন ধুলোর পথে-
তারই মাধুর্যে ঋতুতে ঋতুতে
রৌদ্রছায়ায় শান্ত বাগানে বাঁচি।
সে-গান আমার বৈশাখী দিনে
যাত্রী-প্রাণের তৃষ্ণার সরোবর।
তারই টানে চলি বাকাচোরা পথে-
লালনের গান স্মৃতির দোসর সে-যে।
(রৌদ্র করোটিতে কাব্যগ্রন্থ)