যতদূর জানি এক ঝাঁঝালো যুবক বুড়ো সুড়ো
এই ক্ষয়া আমার ভেতরকার নিভৃত বাসিন্দা
অনেক বছর ধরে। বসে থাকে, ঝাঁকায় দীঘল
কেশর শিং মাঝে মাঝে আমাকে থামিয়ে আওড়ায় পঙ্ক্তিমালা।
যুবকটি আমার গহন থেকে নিঝুম বেরিয়ে
সিঁড়ি বেয়ে গলিপথে নেমে
হেঁটে হেঁটে প্রধান সড়কে চলে যায়,
যেতে থাকে, যেতে থাকে উদ্দেশ্যবিহীন।
কখনও বাতাসে চুল ওড়ে তরুণের, কখনও বা
রোদের কামড়ে তার গায়ের চামড়া পুড়ে যায়, স্নেহ চায়
লাজুক জ্যোৎস্নার। নেই কোনও বান্ধবের
আস্তানা কোথাও কিছুক্ষণ জিরোবার।
তরুণ চলেছে হেঁটে পাথুরে রাস্তায়, যেতে যেতে
দেখছে দু’পাশে কত বাড়ি একরোখা তীক্ষ্ণ সাঁড়াশির মতো
নখের হামলা সয়ে দিব্যি টিকে আছে
প্রতিবাদহীন, রক্তধারা বয় দেয়ালে দেয়ালে।
এই কি আমার জন্মশহর?-যুবক ভাবে এবং চালায়
পদযুগ অযান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়। ভেতরের সব
ক্ষয়ে-যাওয়া যন্ত্রের আসর কেঁপে ওঠে ভয়ানক,
তরুণ সতেজ হাওয়া টেনে নিতে চায়, নিতে থাকে
সোজা বাঁকা নানা পথে চলতে চলতে
যুবকটি দ্যাখে কোনও দিকে সবুজের চিহ্ন নেই,
ইতস্তত একটি কি দুটি গাছ মরে পড়ে আছে;
একটি পাখিও চোখে পড়েনি সন্ধানী তরুণের।
কী করবে? কোন্ দিকে যাবে আর? সিদ্ধান্ত গ্রহণে
ব্যর্থ সে তরুণ; অকস্মাৎ কে যেন প্রবল টানে
পেছনে ঠেলছে তাকে, অসহায় যুবা জংধরা
খাঁচার ভেতর দ্রুত ফিরে যেতে থাকে।
হায়, প্রত্যাবর্তনের পরেও কেমন ব্য্যাকুলতা জন্ম নেয়
জংধরা খাঁচার ভেতর, তরুণের ঘাড়ে নেমে-আসা স্ফীত
কেশরাশি ফুঁসে ওঠে ঘন ঘন, ঘুমন্ত যৌবন
অধীর বাড়ায় হাত অনুপম জাগৃতির দিকে।
(ভাঙাচোরা চাঁদ মুখ কালো করে ধুকছেকাব্যগ্রন্থ)