গোড়াতেই নিষেধের তর্জনী উদ্যত ছিলো, ছিলে
সুপ্রাচীন শকুনের কর্কশ আওয়াজে
নিশ্চিত মুদ্রিত
আমার নিজস্ব পরিণাম। যেন ধু ধু মরুভূমি
কিংবা কোনো পানা পুকুরে কি জন্মান্ধ ডোবায়
অস্তিত্ব বিলীন হবে কিংবা হবো সেই জলমগ্ন ভুল প্রত্ন
পরিশ্রমী, ধৈর্যশীল, উদ্যমপ্রবণ ধীবরের জাল যাকে
ব্যাকুল আনবে টেনে নৌকোর গলুইয়ে-
এইমতো ভয়ংকর সংকেত চকিতে
উঠেছিলো কেঁপে রুদ্ধ গোলকধাঁধায়।
আমিতো বারণ মেনে বিশ্রুত স্থপতি
ধীমান পিতার
পারতাম জলপাই আর বৃষমাংস খেয়ে,
পান ক’রে চামড়ার থলে থেকে উজ্জ্বল মদিরা
এবং নিভৃত কুঞ্জে তরুণীকে আলিঙ্গনে মোহাবিষ্ট ক’রে,
ধারালো ক্ষুরের স্পর্শসুখ নিয়ে প্রত্যহ সকালে
সাধারণ মানুষের মতো গোচারণ, শষ্যক্ষেত আর
সন্তান লালন ক’রে কাটাতে সময়।
পারতাম সুহৃদের সঙ্গে প্রীতি বিনিময়ে
খুশি হতে, তৃপ্তি পেতে পাতার মর্মরে,
বনদোয়েলের গানে, তামাটে দুপুরে
পদরেখা লাঞ্ছিত জঙ্গলে
নিজেকে বিযুক্ত ক’রে মধু আহরণে।
কী-যে হলো, অকস্মাৎ পেরিয়ে গোলকধাঁধা পিতৃদত্ত ডান।
ভর ক’রে কিছুক্ষণ ওড়ার পরেই
রৌদ্রের সোনালি মদ আমার শিরার
ধরালো স্পর্ধার নেশা। শৈশবে কৈশোরে কতদিন
দেখেছি পাখির ওড়া উদার আকাশে। ঈগলের
দুর্নিবার ঊর্ধচারী ডানার চাঞ্চল্যে ছিলো সায়
সর্বদা আমার, তাই কামোদ্দীপ্তা যুবতীর মতো
প্রবল অপ্রতিরোধ্য আমার উচ্চাভিলাষ আমাকে অনেক
উঁচুতে মেঘের স্তরে স্তরে
রৌদ্রের সমুদ্রে নিয়ে গেলো। দ্বিধাহীন আমি উড়ে
গেলাম সূর্যের ঠোঁটে কোনো রক্ষাকবচবিহীন
প্রার্থনার মতো।
কখনো মৃত্যুর আগে মানুষ জানে না
নিজের সঠিক পরিণতি। পালকের ভাঁজে
সর্বনাশ নিতেছে নিশ্বাস
জেনেও নিয়েছি বেছে অসম্ভব উত্তপ্ত বলয়
পাখা মেলবার, যদি আমি এড়িয়ে ঝুঁকির আঁচ
নিরাপদ নিচে উড়ে উড়ে গন্তব্যে যেতাম তবে কি পেতাম এই অমরত্বময় শিহরণ?
তবে কি আমার নাম স্মৃতির মতন
কখনো উঠতো বেজে রৌদ্রময় পথে জ্যোৎস্নালোকে
চারণের নৈসর্গিক, স্বপ্নজীবী সান্দ্র উচ্চারণে?
সমগ্র জাতির কোন কাজে লাগবে না
এই বলিদান, শুধু অভীপ্সার ক্ষণিকের গান
গেলাম নিভৃতে রেখে ঝাঁ ঝাঁ শূন্যতায়।
অর্জন করেছি আমি অকাল লুপ্তির বিনিময়ে
সবার কীর্তনযোগ্য গাথা,
যেহেতু স্বেচ্ছায়
করেছি অমোঘ নির্বাচন
ব্যাপ্ত, জ্বলজ্বলে, ক্ষমাহীন রুদ্র নিজস্ব আকাশ।
(ইকারুসের আকাশ কাব্যগ্রন্থ)