এখন নিজেকে বলি মাঝে-মধ্যে, বেলা নিভে আসে
ক্রমে, তুমি যমে ও মানুষের টানাটানি
দেখেছো গ্রামের ঘরে, শহরের ফ্ল্যাটে,
আর অধিবাস্তব নাটোর
কুশীলবদের সাজঘরে অকস্মাৎ বজ্রপাত
করেছো প্রত্যক্ষ সাঁঝরাতে। তাছাড়া পাহাড়ি পথে
ধস নেমে যেতে দেখে আঁৎকে উঠেছি,
এবং পুরানো দালানের
ভিত নড়া, ভেঙেপড়া আমার সত্তার কাঠামোকে
নাড়িয়ে দিয়েছে তীব্রতায়। ভবঘুরে
কাবিলের মতো
যন্ত্রণর দাগ বয়ে বেড়াচ্ছি নিয়ত সাত ঘাটে।

বাগান যাই না ইদানীং, কোনোদিন যদি চলে
যাই ভুলে, ভয়
ফণা তোলে, ফুলগুলি নিমেষে করোটি হয়ে যায়,
বৃক্ষরাজি বিশীর্ণ কংকাল। গোধূলিতে
বাগান উগরে দেয় ক্রমাগত পুরাতন শব। শেয়ালের
দাঁতে বিঁধে থাকে যুবাদের হৃৎপিণ্ড।

আমার গন্তব্য নয় নদীতীর আর, ঢেউয়ে ঢেউয়ে
ছই-অলা নৌকা
অথবা ডিঙির দোলা দেখে আজকাল
পাই না আমোদ, ভাটিয়ালী
শোকগাতা হয়ে জলে মেশে, নদী বারবার
আমার উদ্দেশে ছুড়ে দেয় শুধু শ্মশানের ধোঁয়া।

আকাশ তো আগের মতোই নীল রঙে
ভরপুর, তবু তাকাই না
আকাশের দিকে রাত জেগে। তারাগুলি
ডাইনির চোখের ধরনে চেয়ে থাকে,
এবং গর্জনশীল নদী বারবার
ভীষণ কামড়ে ধরে কাজল মাটির ঘাড়, দেবদূতগণ
খেঁকশেয়ালের মতো হয়ে যান দ্রুত।
কখনো কখনো
মেঘ ফেটে রক্ত ঝরে, কয়েকটি লাশে
ঢেকে গেছে আমাদের সমস্ত আকাশ।

   (অবিরল জলভ্রমি কাব্যগ্রন্থ)