পায়ের তলায় মাটি আজকাল বড় জাহাঁবাজ,
হিংস্র হয়ে উঠেছে, আকাশ
যখন তখন চোখ রাঙায় এবং মনে হয় এ রকম
ভয়াবহ অন্ধকার নামেনি কখনও চারদিক
লুপ্ত ক’রে রক্ত-পানি-করা হিম অর্থহীনতায় আর। মানবের,
মানবীর মুখচ্ছদ এইমতো নির্বিকার পাথর-স্বরূপ
দেখিনি কখনও আগে। হাটে, মাঠে, ঘাটে
হেঁটে যায় ওরা, যেন পুতুলের নিষ্প্রাণ মিছিল!
এ কি আমাদের দেশ, যে-দেশে একদা
জনসাধারণ শহরে ও গ্রামে শান্তির ছায়ায় বসবাস
করেছে, দেখেছে রূপের স্বপ্ন নির্বিঘ্ন নিদ্রার অপরূপ
কোমল উদ্যানে? এ কি সেই বাংলাদেশ, কণ্ঠে যার
দুলেছে গৌরবদৃপ্ত বিজয়ের মালা
মুক্তিযোদ্ধা, ত্যাগী নেতা, সাধারণ মানুষের অনন্য সাধনে।
শোণিত-সাগর থেকে জেগে-ওঠা স্বাধীনতা-পদ্মটিকে যারা
ছিঁড়ে-খুঁড়ে লাঞ্ছিত করার
খায়েশে মেতেছে ঠারে ঠোরে এমন কি
মাঝে মাঝে স্পষ্টতই, তাদের তোয়াজে মেতে থাকে
নানান পাড়ার নানা মোড়ল এখন। ফন্দি আঁটে ছদ্মবেশী
অস্ত্রাঘাতে প্রগতির তেজী ঘোড়াটিকে খোঁড়া ক’রে দেয়ার খায়েশে।
আমাদের কত না নিঝুম স্বপ্ন থেঁত্লে যাচ্ছে বুটের তলায়,
কত যে পদ্যের পঙক্তি বেঘোরে গুমরে মরে কবির খাতায়
প্রখর দুপুরে আর নিশীথের বিরান প্রহরে। শব্দমালা
কখনও করুণ ফোঁপানিতে কম্পমান, কখনও-বা নজরুলী
দুলে-ওঠা বাবরির ধরনে রাগী, আগুনের আলিঙ্গনে রাঙা।
আগুনের তাপ কমে এলে স্বদেশের বেদনার্ত মুখ ভেসে ওঠে।
যেন স্বপ্নে আমার চকিতে মনে হ’ল- দিব্যি পূর্ব ও পশ্চিম,
উত্তর দক্ষিণ, ডান-বাম সব দিকে উচ্চারিত
প্রগতির জয়বার্তা, ঐ তো ওড়ে আসমানে কল্যাণের প্রশান্ত পতাকা-
চারদিক থেকে নর-নারী,
শিশু ছুটে আসছে সবাই। দীর্ঘস্থায়ী অমাবস্যা পলাতক,
কোনও গ্রীক দেবীর মুখের মতো চাঁদ হাসে আকাশের নীলে।
(ভাঙাচোরা চাঁদ মুখ কালো করে ধুকছেকাব্যগ্রন্থ)