সিকি শতাব্দী আগের কথা, খুব সকালবেলা
ঘুম ভাঙলো আমার, দেখি
সূর্য রূপদক্ষ রঙরেজের মতো
রোদের পোঁচড়ায় রাঙিয়ে দিচ্ছে দশদিক,
আর সদ্য-হাঁটতে-শেখা আমার ছেলে মাতালের ধরনে
এগিয়ে যাচ্ছে দেওয়ালের দিকে। ওর ছোট্র ছায়া
পড়েছে দেওয়ালে আর দৃষ্টিতে
রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে সে দেখছে নিজের ছায়াটিকে।
সেই মুহূর্তে কী ভাবছিলো সেই শিশু,
আমার সন্তান? ভাবছিলো কি ওর জন্যে নতুন ধরনের
একটা খেলনা টানানো রয়েছে দেওয়ালে?
হয়তো খেলনা মনে করেই
সে তার দশটি ব্যগ্র আঙ্গুল দিয়ে
ছুঁতে চাইছিলো নিজস্ব ছায়া।
শেষ অব্দি
ছায়া খুটে বস্তুত কিছুই পাওয়া যায় না,
এই সামান্য কথাটা বোঝার জন্যে
ওকে দীর্ঘকাল অপেক্ষা করতে হয়েছে।
বর্তমানে আমার ছেলের বয়স পঁচিশ। এখন সে
অনেক কিছুর সঙ্গেই
দিব্যি বোঝাপড়া করে নিতে পারে,
শৈশবে যা ছিল ওর সাধ্যাতীত। কেউ কেউ বলে,
কোনো কোনো ব্যাপারে
আমার সঙ্গে ওর নাকি প্রচুর মিল।
ঝাঁকড়া চুল আঁচড়াবার সময়
ওর মুখে যে ভঙ্গি ফোটে
তা হুবহু আমার মুখভঙ্গি। টেলিফোনে
ওর গলা শুনে অনেকে
আমার কণ্ঠস্বর বলে ভুল করে এবং
মাঝে-মধ্যে ওর মা বলেন, ‘ও যখন কাছে আসে,
তখন আমি তোমার অস্তিত্বের ঘ্রাণ পাই।‘
সর্বোপরি আমার পুত্র
আমার মতই ভীষণ দ্বিধাগ্রস্ত
এবং কিছুটা উড়নচণ্ডী।
কী জানেন, আমাদের দু’জনের মধ্যে
অমিল ও নেহাত কম নয়। আমি বেড়াল পছন্দ করি,
সে পুষতে চায় কুকুর;
আমি একদিন অন্তর ক্লান শেভ করি আর সে
গজিয়েছে স্তালিনের মতো গোঁফ;
অবিশ্বাসের আদিগন্ত অমাবস্যায়
আমি এক বিভ্রান্ত পর্যটক,
তার আঁজলায় টলটলে জলের মতো
বিশ্বাসের আলো। আমি ছায়াবিলাসী
আর সে নিজেরই ছায়া দেখে চমকে ওঠে যখন তখন।
(অস্ত্রে আমার বিশ্বাস নেই কাব্যগ্রন্থ)