আজ আমি কোনও কাজ করব না। আজ সকাল-সন্ধ্যা আমি
আমার ব্যক্তিগত হরতাল ঘোষণা করেছি। আমি নিঃসঙ্গ, সমিতিছুট;
পিকেটিং চালাবার মতো দলবল আমার নেই। যা কিছু করবার একা
আমাকেই করতে হবে। ভোরবেলার প্রথম আলো যখন গাছের
সবুজ ঠোঁটে চুমো খাবে, বারান্দায় দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখব না।
অন্ধকার ঘরেই শুয়ে থাকব কিছুক্ষণ, জ্বালব না আলো শেষরাতের
স্পর্শলাগা জনহীন গলির সৌন্দর্য উপভোগ করতে জানালার কাছে গিয়ে
দাঁড়াব না। বেলা বাড়তেই কয়েকটি প্রজাপতি উড়ে আসবে আমার ঘরের
ভেতর। ওদের দেখে মুখ ফিরিয়ে নেব, আগেকার মতো জিগ্যেশ করব না
ওদের কুশল। খবরের কাগজ পড়ে থাকবে এক পাশে, চোখ পর্যন্ত বুলাব না
পাতায়। স্নানাহার থেকে বিরত থাকব আজ। দু’দিনের না-কামানো
দাড়িকে আরও একদিন বাড়তে দেব। বাংলা একাডেমীর সাহিত্য সভায় অথবা
আজিজ সুপার মার্কেটে আজ আমাকে দেখবে না কেউ। কোনও বই কিংবা লিটল
ম্যাগাজিন কেনার তাগিদ অনুভব করব না আমি। আজ কোনও কোনও আড্ডা হবে না
আমার ঘরে। না, ডাকঘরেও যাব না পোস্টকার্ড কিংবা এনভেলাপ কেনার জন্যে।
কোনও বই ছুঁয়ে দেখব না, বলে দিচ্ছি। আমার ব্যক্তিগত হরতাল পুরোদমে
সফল হবে। সে আজ থেকে ক’দিন আমার এই জন্মশহরে তার অনুপস্থিতির ঘোর
অমাবস্যা ছড়িয়ে রাখবে। এই অসহনীয় অমাবস্যার প্রতিবাদে সকল কাজে
তালা ঝুলিয়ে দিয়েছি।
হঠাৎ কবিতা সব কাঁটাতারের ব্যারিকেড ভেঙেচুরে আমার মগজের কোষে
কোষে গায় বীজবপনের সোনালি গান। কবিতা ধর্মঘটী কলমকে তুলে দিল
আমার হাতে। শুধু গৌরীর না-থাকার বেদনাকে আমার ভেতরে দ্বিগুণ করে
কবিতা ফুটতে থাকে নীলাক্ষরে শাদা পাতায়।
(মেঘলোকে মনোজ নিবাস কাব্যগ্রন্থ)