জো, তুমি আমাকে চিনবে না। আমি তোমারই মতো
একজন কালো মানুষ গলার সবচেয়ে
উঁচু পর্দায় গাইছি সেতুবন্ধের গান, যে-গানে
তোমার দিলখোলা সুরও লাগছে।
জো, যখন ওরা তোমার চমড়ায় জ্বালা-ধরানো
সপাং সপাং চাবুক মারে আর
হো হো করে হেসে ওঠে,
তখন কালসিটে পড়ে সভ্যতার পিঠে।
যখন ওরা বুটজুতোমোড়া পায়ে লাথি মারে তোমাকে,
তখন ধূলায় মুখ থুবড়ে পড়ে মানবতা।
জো, যখন ওরা তোমাকে
হাত-পা বেঁধে নির্জন রাস্তায় গার্বেজ ক্যানের পাশে
ফেলে রাখে, তখন ক্ষ্যাপাটে অন্ধকারে
ভবিষ্যত কাতরাতে থাকে
গা ঝাড়া দিয়ে ওঠার জন্যে।
যদিও আমি তোমাকে কখনো দেখিনি জো,
তবু বাইবেলের কালো অক্ষরের মতো তোমার দু’ফোটা চোখ
তোমার বেদনার্ত মুখ বারংবার
ভেসে ওঠে আমার হৃদয়ে, তোমার বেদনা
এশিয়া, আফ্রিকা আর লাতিন আমেরিকায় ব্যাপ্ত, জো।
আমি একজন ফাঁসির আসামিকে জানতাম,
যিনি মধ্যরাতে আবৃত্তি করতেন রবীন্দ্রনাথের কবিতা।
আমি এক সুদর্শন যুবাকে জানতাম,
যে দয়িতার মান রাখার জন্যে জান কবুল করেছিলো
আমাদের একাত্তরের মুক্তযুদ্ধে,
আমি একজন যাবজ্জীবন কারাবন্দি তেজি
নেতাকে জানতাম, দুঃস্বপ্ন থেকে জেগে উঠে
যিনি কোনো কোনো রাতে তার শিশুকন্যাকে একটু
স্পর্শ করার জন্যে, ওর মাথার ঘ্রাণ নেয়ার জন্যে উদ্বেল আর
ব্যাকুল হয়ে আঁকড়ে ধরতেন
কারাগারের শিক।
আমি এমন এক তরুণের কথা জানতাম,
যে তার কবিতায় আলালের ঘরের দুলাল, মেনিমুখো! শব্দাবলি ঝেড়ে ফেলে
অপেক্ষা করতো সেদিনের জন্যে,
যেদিন তার কবিতা হবে মৌলানা ভাসানী
এবং শেখ মুজিবের সূর্যমুখী ভাষণের মতো।
যখন তাদের কথা মনে পড়ে,
তখন তোমার কথা নতুন করে ভাবি, জো।
জো, যখন তোমার পাঁচ বছরের ছেলের
বুক থেকে রাস্তায় ওরা ঝরায় টকটকে লাল রক্ত,
যেমন পিরিচে ঢেলে দ্যায় কফি,
জো, যখন তোমার পোয়াতি বউ হায়নাদের
দৃষ্টি থেকে পালানোর জন্যে দৌড় তে দৌড় তে
মাঝপথে হুমড়ি খেয়ে পড়ে,
জো, যখন তোমার সাহোদরকে ওরা
লটাকিয়ে দ্যায় ফাঁসিতে,
তখন কাঁচা দুধের ফেনার মতো ভোরের শাদা আলোয়
বাইবেলের কালো অক্ষরগুলো আর্তনাদ করতে করতে
হঠাৎ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
(আমার কোন তাড়া নেই কাব্যগ্রন্থ)