আকাশের কয়েকটি কোঁকড়ানো মেঘ পাড়ার নার্সারির কচি ঘাস
চিবিয়ে খাচ্ছে। ওদের চোখে তৃপ্তির কুয়াশা আর গোলাপগুলি
ঈষৎ লাজনম্র আর ভয়কাতর। এখানে তোমার দৃষ্টি পড়েনি ক’দিন।
আকাশ থেকে এক অতিকায় পাখি এসে নামলে, তুমি তার জঠর থেকে
বেরিয়ে আসবে হাওয়ায় আঁচল উড়িয়ে। মনের চোখে দেখব তোমাকে।
তুমি কি এলে বহু যুগের স্মৃতি জড়িয়ে তোমার সত্তায়? তোমার চোখে যেন
সুদূরতার ছায়ানিঝুম আত্মপ্রকাশ। জানলার শার্সি ধরে সেই কবে থেকে
দাঁড়িয়ে আছি। ঘণ্টা দেড়েক আগে বৃষ্টি এক পশলা চুমো ঝরিয়ে
গেছে আশেপাশে দরদালানে, গলিতে, নার্সারিতে। কয়েকটি কোঁকড়ানো মেঘ,
যেগুলি চরছিল নার্সারিতে, চিবোচ্ছিল কচি ঘাস, এখন উধাও। তুমি তোমার
ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিয়েছ মধ্যরাত্রির শয্যায়। আমার বাসনাগুলি পুরুষ
মৌমাছি হয়ে উঠছে তোমার ক্লান্ত যৌবনের মৌচাক ঘিরে, তুমি না
জেনেই ঘুমিয়ে পড়বে।
এখন আমার অসমাপ্ত কবিতা তোমাকে ভাবছে কয়েকটি সড়ক, বইয়ের
দোকান, ট্রাফিক-লাইট, মসজিদ, রেস্তোরাঁ, হাসপাতাল, ওষুধের দোকান
আর সিনেমা হলের ওপার থেকে। আমার অসমাপ্ত কবিতার রঙিন মাছগুলি
ডুবসাঁতার দিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে তোমার মেহগলি কাঠের খাটের কিনারে
স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। কোমল নিদ্রায় তোমার শরীর অন্যায়বিহীন আর
কী নির্মল। অন্য কোনও পুরুষের স্পর্শের কালো কখনও তোমার শরীরে
ছড়িয়েছে কি না, এ নিয়ে আমার অসমাপ্ত কবিতা এখন তেমন ভাবিত নয়।
সে এখন গাঢ় অনুরাগে এই নিঝুম প্রহরে তোমার অধরে, গালে, স্তনযুগলে
আর নাভিমূলে মন্দিরে পুরোহিতের মতো প্রসাদ-রেণু ছিটিয়ে দিচ্ছে অবিরল।
রাত্রির টাইম-পিসে এই মুহূর্তে কটা বাজে, খেয়াল নেই। তোমার ঘুম, একটি
রাতজাগা পাখি, হাওয়ো-মাতাল গাছ, জনহীন গলি, এতিমখানার অন্ধ নীরবতা
আমার মধ্যে কী এক অস্থিরতা ডেকে আনে। অন্ধকারের আড়ালে ঢাকা-পড়া
নক্ষত্র আর ভাসমান মেঘের গলা জড়িয়ে আমার অসমাপ্ত কবিতা গন্তব্যের
প্রায় সীমান্তে পৌঁছে যায়। দ্রুত হতে থাকে বুকের স্পন্দন। এই যাত্রা কে জানে
কোথায় থামবে? কোনও পুরানো কবরস্তানে নাকি নতুন কোনও পুষ্পল উদ্যানে?
(মেঘলোকে মনোজ নিবাস কাব্যগ্রন্থ)