স্বপ্নের ভেতরে পেয়েছি একটি সংখ্যা, তিনশো তের,
৩১৩ হীরের লকেটের মতো দোলে
সারাক্ষণ দৃষ্টিপথে, মায়াবী।
এই সংখ্যা দুলে উঠলেই অজস্র ময়ূর পেখম মেলে
আমার একলা ঘরে, অবিস্মরণীভাবে
গোলাপ বাগান উন্মীলিত হয় মেঝে ফুঁড়ে হঠাৎ,
দেয়াল থেকে বেরিয়ে আসে সিংহাসন।
এই সংখ্যা দুলে উঠলেই
একজন তৃষ্ণার্ত পথিককে দেখি আঁজলা ভ’রে ঝরনা তুলে নিতে,
প্রাচীন গীতে গুঞ্জরিত হয় সত্তা,
নাবিকের নিরাপত্তাময় জলপথে নামে গোধূলি বেলা,
প্রেমিকের ওষ্ঠে ঝরে শত চুম্বন, মধুর, মদির,
বারবার ফিরে আসে বিয়ে বাড়ির চিত্রিত কুলো
আর রঙিন মাটির প্রদীপ।
এই স্বপ্নাদ্য সংখ্যা
কিসের যোগফল কিংবা গুণফল, জানিনা;
অবশ্যই পুণ্যফল মানি।
যখন ৩১৩ রবাবের মতো বাজে
এই শহরের সকল মূকের কণ্ঠ থেকে ঝরে দিব্য সঙ্গীত,
যখন ৩১৩ একটি বাক্যশোভা,
এই শহরের ব্যর্থতম কবির লেখনী হয় সকল কবিতার উৎস,
যখন ৩১৩ নীল নক্ষত্রের মতো জ্বলে,
প্রতিটি পথভ্রষ্ট পাত্থজন তার গন্তব্যে পৌঁছে যায়,
যখন ৩১৩ হাতের মতো প্রসারিত হয়,
হতচ্ছাড়া তীরভূমি হয়ে যায় সবচেয়ে সম্পন্ন বন্দর,
নাবিকের গানে আর সুন্দরীদের গুঞ্জনে মুখর,
যখন ৩১৩ মসলিনের রুমালের মতো ওড়ে,
বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক সংঘর্যসমূহ যায় থেমে,
যখন ৩১৩ চোখের তারার মতো কাঁপে,
এই শহরের অন্ধ সম্প্রদায় একসঙ্গে ফিরে পায় দৃষ্টি,
এই শহরের সকল নৈরাশ্যবাদী বুকের ভেতর
গান গায় জলকন্যা,
৩১৩ যখন দরবেশের তসবিহ,
ধাবমান ক্ষুধার্ত বাঘ হরিণকে বাগে পেয়েও ছেড়ে দেয়
সীমাহীন নিস্পৃহতায়,
নিষ্ঠুরতম জল্লাদের হত বেহালা হ’য়ে বাজে,
সবচেয়ে বিপজ্জনক চোরাবালি বদলে যায় পার্কে,
ভয়াল ময়াল রঙধনুর বর্ণচ্ছটায়।
এই যে আমি স্বপ্নাদ্য একটি সংখ্যা নিয়ে মেতে আছি,
এই সংখ্যাটিকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে
অনেক খানাখন্দে পড়েছি কাঁটাতারে আটকে আমার
হাত-পা হয়েছে জখম, তবু কোনো
কূলকিনারা হয়নি, শুধু রূপসীর হাসির মতো
একটা মরীচিকা আমাকে ডেকে নিয়ে গেছে বারংবার।
কে আমি? কী-ই বা আমি? সেই
চিরকেলে প্রশ্ন করি নিরন্তর নিজেকেই। এখানে
এসেছি কেন? কী কর্তব্য আমার?
আখেরে কোথায় যাবো? এই যে ব’সে থাকি নিশ্চুপ,
চোখ রাখি গাছের মগডালে, শুনি টিকটিকির ধ্বনি,
মাঝে-মধ্যে ভাবি ঐ গাছের বাকল এসে লাগবে আমার শরীরে,
হয়তো আমাকে দেয়াল ভেবে জন্মান্ধজন
উন্নয়নশীল দেশে ঘনিয়ে-আসা দুর্নীতির মতো অন্ধকারে
পথ চলবে। স্বরূপ অন্বেষায় ক্লান্ত আমি
পথের নকশা হারিয়ে ফেলেছি-
কেউ কি আমাকে বলে দেবে অনেক আমির ভিড়ে
কোন্ আমি বাস্তবিকই আমি?
বলে দেবেন কি কোনো যীশু কিংবা শাক্যমুণি?
একপালে ডালকুত্তা-তাড়িত কয়েদী যেমন
ভুলুন্ঠিত হয়ে খিম্চে ধরে মাটি কিংবা শেকড়বাকড়
তেমনি আমি হাত বাড়িয়েছি সেই আমার
স্বপ্নাদ্য সংখ্যাটির দিকে স্বপ্নাদিষ্ট পুরুষের মতো।
৩১৩ যখন কোনো গুণীর সর্বদা-তরুণ কণ্ঠের তান,
রাজবন্দীগণ দেবদূতের মতো উড়ে যান নীলিমায়
জন্মান্ধ সেল ছেড়ে
লাঞ্ছিত, নির্যাতিত জননেতা ভূষিত হন জয়মাল্যে,
স্বৈরতন্ত্রী রাষ্ট্রপুঞ্জে জনগণ বাক-স্বাধীনতা ফিরে পান
অবলীলায়।
৩১৩ তুমি ফিরে এসো আমার চোখের পাতায়,
ফিরে এসো করতলে, ফিরে এসো আমার
স্বপ্নে জাগরণে, যেমন শস্য ফিরে আসে
ভাগ ভাষীর ভাবনায়, দুঃসহ জীবন যাপনে, বুকের ভেতরে,
৩১৩ তুমি ফিরে এসো।
(ইকারুসের আকাশ কাব্যগ্রন্থ)