আমার বাড়ি উত্তরে সেই ধরলা নদীর পাড়ে।
সারা দেশটা ঘুরে দেখব। মামা বললেন, আরে।

একদিন যে নিষেধ করেছিলাম ছোট্ট তোকে,
সেই দুঃখে নদীর ধারা এখনো তোর চোখে?
বেরিয়ে পড়। তবে কথাটা মনে রাখিস শোন,
দেশের কথা কুড়িয়ে ফেরা-ই আসল পর্যটন।
ট্রেন ছেড়ে দেয় ভোঁ বাজিয়ে। তো রংপুর ঢুকে
রঙটাকে অং শুনতে পেলাম কিষানজনের মুখে
রঙ্গ হলো তাই নিয়ে খুব। নীলফামারির নীল
দেখি আকাশ খুব মেখেছে- তারায় ঝিলমিল
ভোলায় ভোলা বিপদ-ভোলা, সাগরে তার পা
বলছে, পায়ে ঠেকাই মাটি, কে দেখি আয়, খা!
জোছনা মেখে সবুজ হেসে ওঠে সুন্দরবন-
বনের মধ্যে আমি সুন্দর, তুমি সুন্দর মন।
বদরগঞ্জে বদর বদর, ভয় নাইরে ভয়
কিশোরগঞ্জে বীরের মতো কিশোর বড় হয়।
বীরগঞ্জের বীর বলছে- মুক্তিযুদ্ধের আমি।
পলাশবাড়ির রক্তপলাশ। পুষ্প নিতে থামি
মামা বলেন- থামা-ও ভালো, চলা অধিক ভালো,
সবার অধিক ভালো জানবি অন্ধকারে আলো
আলোকদিয়া জ্বালায় দীয়া, রাতেও পথ চলি
মেঘনা ঢালে মেঘের মতো কাজল কালো পলি
টুঙ্গীপাড়ায় কী টলটল বাঘৈর নদীর পানি,
ঘাটের পাশে জলটুঙ্গীর নির্জন ঘরখানি।
অনেক দিনের অমাবস্যার পরে পূর্ণিমায়—
আবার দেখি বঙ্গবন্ধু যাচ্ছেন নৌকায়!
আনন্দে যাই গৌরনদী গৌরাঙ্গের সাথে
ফুলছড়ি তো পেরিয়ে যাই ফুলের ছড়ি হাতে।
বাহুবলের ভেতর দিয়ে যাবার সময় শুনি—
বাহুবলের ভরসা রাখিস, ভয় যাবে এক্ষুনি।
নিঝুমদ্বীপে যেতে যেতে মনে পড়লো জুম।
জয়মুনিতে খুব লেগেছে জয়ধ্বনির ধুম।
মুনির মতো ধ্যানগম্ভীর, জয়ের মতো লক্ষ্য,
যোদ্ধা এবং ভাবুকতায় নিবন্ধিত সখ্য।

একাত্তরের রক্তে আজও ক্ষেত লাল খেতলালে—
শরণখোলায় স্মরণ করি হরণ ফাঁকতালে!

ঢাকায় গিয়ে ঢাক বাজিয়ে শীতলক্ষ্যার জলে
শীতল হয়ে ভিড়ে গেলাম ময়নামতির দলে।
কান জুড়োল কর্ণফুলীর গানে, গেলাম লামা—
তিব্বতী নয় এ লামাটি— লালমাটিতে থামা।
কমলগঞ্জে কমল ফুলের লাল সূর্য পাটে।
লালবিবিদের হাট বসেছে লালমনিরহাটে।
সেই রঙে লাল দেখে নিলাম একাত্তরের সূর্য।
বধ্যভূমির সন্ধানে ভাই বিশ্বনাথে ঘুরছো?

রাঙামাটির মাটি রাঙা। যুদ্ধটা পাংশাতে—
নূরলদীনের গল্প পেলাম তারাগঞ্জের রাতে।

নুনখাওয়াতে যাওয়ার পথে তেভাগাদের ধান।
রক্তমাখা স্মৃতির পুণ্যে নাচোল চলমান।
ধর্মপাশায় ধর্মভেদে মানুষে ভেদ নাই।
মিঠাপানির মিঠাপুকুর, সবাই মিলে খাই।

পঞ্চগড়ে গড় করলাম- ও হিমালয় তুমি!
তোমার মতো ঊর্ধ্বে উঠুক আমার জন্মভূমি।

পর্যটনের পথিক আমি রামসাগরে যাই।
রাম এখনো বনবাসেই রাবণ মরে নাই।
সাগরে যাই কক্সবাজারে, বাতি কুতুবদিয়ার।
নীল পাড়টি শাড়ি সবুজ অঙ্গে আমার মা'র।
কী অপরূপ রূপে তিনি, সাধ মেটে না দেখে।
পদ্য লেখার কলম আমার মায়ের ছবি লেখে।

.....
কবিতা: পর্যটনে যাই
ব‌ই : সবুজ নীল লাল জামা
কবি : সৈয়দ শামসুল হক