বাংলার প্রান্তরে হঠাৎ আফ্রিকার সাভানার রোদ ঝলসে ওঠে।
তুমিই কি? থেকে থেকে লাফিয়ে উঠতে চাও কোলে।
আমি স্তম্ভিত। এই তুমি! বন্য ও উদ্দাম! এবং উৎকর্ণ।
চাবুকের শব্দ সপাং সপ। বাতাস হচ্ছে রক্তাক্ত।
তোমার ভীতিগুলোই কালো কালো ডোরা—
তোমার মখমল শুভ্রতায় সেই কালো ডোরা—
পোষ-না-মানা তোমার সত্তাকে যারা
চাবুকের তাড়নায় ছিন্ন করে,
তাদেরই তো দাগ তোমার কালোসাদা শাড়িতে।
এবং লাল ফোঁটা মাঝে মাঝে!
তোমার তো রক্তাক্ত হবার কথা নয়।
বরং তুমিই সেই উজ্জ্বল লোহিতের দিকে চোখ পেতে আছো
যা নববধূর অঙ্গে ভোরের নদীটির স্রোতের মতো
প্রবাহিত হয় শাড়ি থেকে!
তুমি এখন শব্দিত হয়ে উঠছ।
তুমি বারবার লাফিয়ে উঠতে চাইছো আমার নিঃসঙ্গ কোলে।
ও আমি তোমার সবুজ প্রান্তর! তোমার অবাধ বিচরণভূমি!
রোদ গলে পড়া জলাশয় যে আমি তোমারই।
আমি তোমার ঘুমিয়ে পড়বার ছায়া-বিতান।
তোমার খুরের দাপট!
তোমার জন্মসহচর স্বাধীনতা।
জেব্রা! অরণ্য থেকে প্রান্তরে!
প্রান্তর থেকে সত্তার এখনো সবুজ চত্বরে।
এবং সেই চত্বরেও তুমি শমিত বা শান্ত নও,
আমার মানব-শরীরে
তুমি জেব্রা উপগত! তুমি ও আমি!
আমাদের ভেতরে জেব্রার দুরন্ত বন্যা—জেব্রাপালের বিশুদ্ধতা
এবং গতিবেগ—মহাদেশ ভেঙে এই বদ্বীপেই তো—
এই গতিবেগেই তো লাফিয়ে ওঠে অক্ষর আমার কলমে
এবং লিখিত হয়ে চলে আমাদের ভালোবাসার বিদ্যুতলেখা।।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ২৩, ২০১১