প্ল্যাটফরমকে কুড়িগ্রামে বলি পেলাটফর্মো।
এঞ্জিন যে হুইসিল দেয় কে বোঝে তার মর্ম?
কখনো তার ভোঁয়ের মধ্যে উথ্ লে ওঠে উচ্ছ্বাস,
কখনো সে কান্না ছাড়ে পাঁজর ভাঙা দীর্ঘশ্বাস।
ঝনঝনিয়ে নিত্য আসে ইস্টিশানে গাড়ি,
হাসিকান্নার আনাগোনা প্ল্যাটফরমে তারই।
আবদুল আলী মুক্তিযোদ্ধা কুড়িগ্রামে থাকে।
দেখা করতে বঙ্গবন্ধু ডেকে পাঠান তাকে।
বীরের খেতাব নিয়ে ফিরল রাতের ট্রেনে আলী।
আলোয় আলো পেলাটফর্মো, শাবাশ, করতালি।
কিছুদিনের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর বুকে বুলেট।
নিবলো বাতি প্ল্যাটফরমে। ট্রেন এলো না। লেট!
প্রজাপতির মতো কন্যা জরিনা তার নাম।
বাজল শানাই। চোদ্দপদে ভোজন সারলাম।
কান্নাভেজা পাড়া-পড়শি সান্ত্বনা দেয় মা-কে।
কাঁদতে কাঁদতে ইস্টিশানে বিদায় দিলাম তাকে।
ফিরল দেশে সেই জরিনা ট্রেনে সকালবেলা।
জ্যান্ত পুতুল কোল ভরেছে, করছে দেয়ালা!
একদিন তো প্ল্যাটফরমে সে কী বিষম ভিড়।
হাসতে হাসতে ট্রেনে উঠছে আমাদের বছির।
রাজধানীতে যাচ্ছে ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে।
কাঁদছ কেন বাপচাচারা? কাঁদার সময় নয় এ।
কাঁদার সময় এলো যখন গুলি চলল ঢাকায়।
মিছিল থেকে ফিরল বছির লাশের খাটিয়ায়।
প্ল্যাটফরমকে কুড়িগ্রামে বলি পেলাটফর্্মো।
পায়ের নিচে বুকটা পেতে দেয়াই তো তার ধর্ম।
আসছে গাড়ি যাচ্ছে গাড়ি উঠছে নামছে লোক।
কেউবা হাসে কেউবা কাঁদে, দেখছে অপলক।
দেখেই যাচ্ছে হাসিকান্নার শোক ও সুখের খেলা।
ট্রেন আসছে ভোঁ বাজিয়ে এ বেলা ও বেলা।
হাসতে হাসতে ট্রেনে উঠছি পেলাটফর্মো থেকে।
কাঁদতে কাঁদতে কুড়িগ্রামে জল যাচ্ছি রেখে।
_________________
কবিতা: হাসিকান্নার আনাগোনা
কবি: সৈয়দ শামসুল হক
গ্রন্থ: সবুজ নীল লাল জামা