জলেশ্বরীর উত্তরে সে
উনিশ কিলোমিটার
ভোগডাঙায় গিয়েছিলাম
সঙ্গে হাওয়ায় গিটার।
ভেবেছিলাম সেখান থেকে
যাব মান্দার বাড়ি
আকবরের সঙ্গে যদি
দেখা করতে পারি।
একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা
আটাত্তরেই তার
ট্রাইবুনালে বিচার হল
রাষ্ট্রোদ্রোহীতার।
দণ্ড পেল ফাঁসির দড়ি
ঝুললো ফাঁসি কাঠে
বৃষ্টি এসে ভেজায় কবর
গ্রীষ্মে কবর ফাটে।
এখন এটি চৈত্র মাস
শিমুল গাছে ফুল
এখন গাছে ধরেছে খুব
দাঁতটকানো কুল।
কুলের টকে দাঁত শিরশির
আকবর কব্বরে,
ইচ্ছে ছিল শোনাব গান
তাকে সমস্বরে।
ও..... আকবর..... হে.....আকবর.....
মৃত্যু এসে ছুঁলো
নড়ছে কেনো তবু তোমার
হাতের আঙুলগুলো।
গান গাইবার বায়না পেয়ে
ভোগডাঙায় গিয়ে,
বঙ্গ গ্রামে ধুম টকাটক
গিটার বাজিয়ে,
মহাবিদ্যালয়ে নবীনবরন অনুষ্ঠানে
রাতটাকে খুব নাচিয়ে দিলাম
মাঈজ-ভান্ডারী গানে।
ভোরবেলাতে যেই ধরেছি ধূসর ধুলি পথ,
হঠাৎ মাটি ফুঁড়েই যেন স্থানীয় সাংসদ
পথ আগলে বলেন
আরে কোথায় চলেছেন
ওই দিকেতো মান্দার বাড়ি
আকবর হোসেন।
কবেই মরে গেছে লোকটা
হাড্ডিতে ঘাস তার,
চলুন আমার বাড়ি
এটা সময় নাস্তার
চলুক রুটি লাও হালুয়া।
আকবর কব্বরে
ইচ্ছে ছিল
আমরা গিয়ে গাইব সমস্বরে।
ও.. আকবর হে.. আকবর
মৃত্যু এসে ছুঁলো
বইছে কেনো তবু তোমার
দীর্ঘশ্বাসগুলো।
কৃষাণ দেখে দগ্ধ মাঠ,
মাঝি নৌকো ভাঙা
নদীর নাম বহ্মপুত্র
ধূধূ বালি ডাঙা
বাছুর ডাকে ছিন্নস্বরে,
গাভীর বাট শূন্য,
এক দোকানেই আড্ডা মারে
পাপ এবং পুণ্য
যে মাটিতেই কোদাল পাড়ি
মাথার খুলি ওঠে,
যে সড়কেই চলতে যাই
রক্ত ধারা ছোটে,
পোশাক খসে পড়ে দেহের,
পাখির পালক ছিন্ন,
কপালজুড়ে দগদগে এক
আগুন পোড়া চিহ্ন।
মানুষগুলো মহিষ যেন,
বাথান এলে পুড়ছে,
বাহাত্তরের সংবিধানের
চার স্তম্ভই উড়ছে,
পুড়িয়ে খাচ্ছে ক্ষেতের আলু,
আকবর কব্বরে,
আমরা বাঁধি শোনাতে গান
তাকে সমস্বরে।
ও.....আকবর.....
হে..... আকবর.....
মৃত্যু এসে ছুঁলো
বইছে কেনো তবু তোমার
দীর্ঘশ্বাসগুলো।
ভোগডাঙার মাননীয়
সংসদের সদস্য
এবং তার কর্মী এবং
সঙ্গীসাথী তোস্য
আমাদের তো তুলে দিলেন
জলেশ্বরীর পথে।
কিছুটা পথ যাবার পর
যখন কোনোমতে
চোখ এড়িয়ে আমরা নেব
মান্দার বাড়ির বাঁক
তক্ষুনি এক উঠল ঝড়
বজ্র দিল হাঁক,
উড়ল ধূলি মাথার খুলি
পায়ের নিচের হাড়,
তীরের মতো রক্ত ছিটে
বৃষ্টি ফোঁটার ধার।
কোথায় উড়ে গেল গিটার
বাঁশি বঙ্গ গ্রাম,
প্রাণ বাঁচাতে জড়িয়ে ধরি
টেলিগ্রাফের থাম,
আছাড় মারে ঝড়ের হাওয়া
আকবর কব্বরে,
আর শোনানো হল না গান
তাকে সমস্বরে।
ও.....আকবর..... হে.....আকবর....
মৃত্যু এসে ছুঁলো
বইছে কেনো তবু তোমার
বুকের ঝড়গুলো।
ও.....আকবর..... হে.....আকবর.....,
ও.....আকবর..... হে.....আকবর.....,
ও.....আকবর..... হে.....আকবর.....,