বাংলাদেশ তোমার আমার
পিতার হাত ধরে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা
উদ্দীপ্ত কিশোরের চিকচিকে চোখ,
গোধূলির রঙ নিয়ে
রাতের অন্ধকার মাড়িয়ে
সূর্যের আলোয় স্নিগ্ধ সকালের প্রস্তুতি,
রিনিঝিনি শব্দ তোলা মায়ের হাতের কাঁকন
ছোট্ট শিশুর বারংবার আশ্রয় নেয়া
অবারিত মমতার আঁচল ।

খাল-বিল, নদী-নালা, মাঠে-ঘাটে
উপচে পড়া শাওনের যৌবন,
কোন এক নির্জন ভর দুপুরে
বিমুগ্ধ প্রশান্তির পুকুর
সেখানে টুপ করে ঝরে পড়া হিজল পাতা,
কিংবা কোন এক কম্পিত শীতে
শিশির ভেজা সকালে ঘাস ফড়িংয়ের মেলা,
হেমন্তের সোনালী নবান্নের ঘ্রাণ
অন্তর দোলায়িত সবুজের ঢেউয়ে ঢেউয়ে
মাতাল করা রাখালিয়া সুর,
হে সুগভীর অনুভূতি !
তুই আকুলিত অতি প্রগাঢ় অনুভবের
প্রিয় বাংলাদেশ ।


আমার বাংলাদেশ
মাঠে মাঠে কৃষাণ কৃষাণীর কর্মঠ দিন
চক্ষু শীতল করা ফসলের মাঠ,
কখনও-বা বন্যার, অনাকাঙ্ক্ষিত খরার
রক্তহিম ভীতিকর চাহনি,
সন্তানেরে প্রবাসে বিদায়কালে
মায়ের চোখ হতে
অনবরত গড়িয়ে পড়া জল
রক্ত পানি করা বিদেশ উপার্জনে
মুখে মুখে এক টুকরো হাসি ।

রিকশার প্যাডেলে প্যাডেলে
ক্রমাগত ঘুরতে থাকা হাওয়া দেয়া চাকা
প্রতিদিনকার কর্মীক মুটে-মজুরের
দেহ হতে ঘাম ঝরা স্বপ্ন
অথবা গতরে টেনে টেনে এগিয়ে নেয়া
মাল বোঝাই ঠেলা গাড়ি,
অর্জিত অতি ক্ষুদ্র সম্বল নিয়ে
দিন শেষে আপন ঝুপড়ি-নিবাসে
খুবই সামান্য চাওয়া পাওয়া
পথ চেয়ে থাকা কতগুলো চোখে
সে-কী আমোদ-আহ্লাদ !
ক্ষুধা নিবারণে অনন্তর প্রশান্তি
অতঃপর তৃপ্তিকর ঘুমে কাটে রাতের প্রহর ।

বাংলাদেশ তোমার আমার
পাশের ঝোপে সাপে-নেউলে ক্রীড়াচক্র
মুহূর্ত থমকে দাঁড়ানো পথিক
দীর্ঘপথ পায়ে হাঁটা ক্লান্ত মুসাফির
প্রবুদ্ধ বৃক্ষছায়ায় অপার প্রশান্তি, কিছুটা বিশ্রাম
গাভীর চোখের মতো সরলতায়
সবুজের মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা
নিষ্পাপ সুন্দরীর সম্ভাষণ,
বসন্তের মৌ মৌ আমন্ত্রিত বাহারি ঘ্রাণ
চৈত্রের বটমূলে রাখালের বাঁশরীর সুর
ভারী অবারিত উদার
একমুঠি কদম ফুলের শুভেচ্ছা ।

আমার বাংলাদেশ
শিকল পরে না, পরতে জানেনা কখনই
সিরাজের দেশপ্রেম, ঈসা খাঁর তরবারি
তিতুমীরের বাঁশের লাঠি, একাত্তরের লাল সিঁড়ি
একুশের রক্তজবা, টগবগে তরুণ
স্বাধীন সীমানায়
প্রজাপতি চঞ্চল নির্ঝরের স্রোত
অবিচারে ফুঁসে ওঠে প্রতিবাদী কণ্ঠ
ঊর্ধ্বে ওঠে হাত
বিক্ষোভে বিক্ষোভে উত্তাল তরঙ্গায়িত ।

তোমার আমার বাংলাদেশ
প্রবল অনুভবে একান্ত আশ্রয় ।

ফিরোজ, মগবাজার, ০৫/০২/২০১৮