একটিবার ! কেবল একটিবার !
বসত ভিটার ধুলো আপন বক্ষে মাখাবো
এ-কী, পারছিনা কেন !
মধ্যরাতে হামাগুড়ি, অন্তরের তীব্র স্পৃহাতে উঠে দাঁড়াতে চায়
অথচ শরীর পারে না, উপুড় হয়ে পড়ে যায় নওশাদ
ভাবনার ঝাঁপি খোলে মস্তিষ্ক …
ওরা যেন জোঁকের মতো
ধীরে ধীরে শুষে নিচ্ছে জীবন-সঞ্চারী লহু
ফোঁটায় ফোঁটায় কেড়ে নেয় শেষ শক্তিরও নির্যাস
জমা হয় তস্করের বাক্সে
তবে কী, দেহের সব শক্তি নিঃশেষ হবে !
হেরে যাবে সে, বঞ্চিত হবে প্রাণের ধুলোর স্পর্শ …
চোখের জল গড়িয়ে ভিজে যায় কপোল - পুরো গণ্ডদেশ
আর ঠুস করে এফোঁড়-ওফোঁড় হওয়া রক্তে
বুক ভিজে যায় নওশাদের ।
এই-তো মনে হয় সেইদিন, কত বছরইবা হবে
প্রিয় ঘর ছেড়েছিল সে
ঐ সময়েও তার দেহ-মনের বল চুরি হয়েছিল
উনিশশত একাত্তর সাল
নয় কি দশ বছরের বালক তখন
অফিসে গেল রেলের প্রকৌশলী পিতা
নিরুদ্দেশ, ফিরল-না কখনই
পেট চলে না, দিন চলে না, ভীষণ অসহায়
নির্বাক হলো জিহ্বা, পায়ে পায়ে একদিন ঘর ছাড়ে
সেই যে শুরু, শেষ হয়না ক্রমাগত পথচলা
সেদিনের সেই পথ ছিল সোঁদা মাটির গন্ধমাখা
গ্রীষ্মে ধুলো-বালির আস্তর
বর্ষাতে হাঁটু-কাদা, দুপাশে ঝোপঝাড় - ছোট ছোট জঙ্গল
প্রাণ দোলানো সেই পথকে বড় আপন মনে হত
সাম্য, মানবিকতা, সামাজিক ন্যায় বিচার
হায় ! দুদণ্ড স্থির হলোনা পথ
অস্থিরতায় আজও পথে প্রান্তে
মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে বেওয়ারিশ লাশ
দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানো শ্লেষের পোস্টার
তালাবন্ধ মুখ, বুকে যেন চেপে আছে
দমবন্ধ অসহ্য পাথরের স্তূপ ।
পথ এখন পিচঢালা, ভারী মসৃণ
বড় বিদ্রুপ করে, দূর - বহুদূর হতে …
উফ ! আর পারছিনা …
সহসা হৃৎপিণ্ড অতি চঞ্চল হয়ে ওঠে নওশাদের
তারপর স্থির চিরদিনের তরে …
ভোরবেলা মানুষের জটলা
কি হয়েছিল লোকটার … ?
কেউ বলে ক্রসফায়ার
কেউ বলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল
গল্প ফেঁদে কারো কারো প্রেস রিলিজ
নওশাদ নির্বাক - চিরতরে নিশ্চুপ
ওদিকে মলিন থেকে মলিনতর ভিটার ধুলো বালি
উপহাস-বিদ্রুপে অট্টহাসে … হা … হা … হা …
ফিরোজ, মগবাজার, ০৬/১০/২০১৮