সুবিন্যাসিত সুসংবদ্ধ অর্থবোধক শব্দেরা হয়ে ওঠে ভাষা, আর ভাষা হলো ভাব প্রকাশের মাধ্যম। এ ভাষা মৌখিক শব্দে হতে পারে, আবার লিখিত আকারে হতে পারে, তবে যারা বাক প্রতিবন্ধি তাদের ভাষা হলো ইশারা-ইঙ্গিত। বিভিন্ন প্রাণী, পশু-পাখি, পোকা-মাকড়, কীট-পতঙ্গ এরাও ভাব প্রকাশ করে। এদের আছে কিছু নির্দিষ্ট শব্দ, ইশারা-ইঙ্গিত, তাই এদের ভাষা খুব সীমাবদ্ধ। এই যে ভাষার কথা বলা হলো এরা সব প্রমূর্ত ভাষা।
এ ছাড়াও আরেক রকম ভাষা আছে, যাকে বলে বিমূর্ত ভাষা, একে বুঝতে হয় অনুভবে। বিমূর্ত ভাষা থাকে প্রকৃতিতে, নিসর্গের নৈঃশব্দে। খাল-বিল, নদী-নালা, ডোবা-পুকুর, পাহাড়-মাঠ, সাগর-আকাশ, মহাসাগর-দিগন্ত, বাতাস-ঘূর্ণিঝড়, মেষ-বৃষ্টি, রঙধনু, আকাশের নীলিমা, হিমাদ্রির তুষারপুঞ্জ, বস্তুজগৎ-প্রতিবেশ, তুলির আঁচড়ে আঁকা শিল্পকর্ম, কৃষকের জমি কর্ষণ, কামারের হাপরের আগুন, কুমারের মৃতশিল্প, জেলেদের মাছ ধরা, তাতি পল্লীর তাঁত শিল্প, প্রতিটি পেশার কর্মকান্ড, এদেরও ভাব আছে, কথা আছে, ভাষা আছে; এ ভাষা বিমূর্ত। এমনকি মানুষ বা প্রতিবেশের সৃষ্ট প্রমূর্ত শব্দ ঝঙ্কারেরও আছে বিমূর্ত ভাষা।
কবিতা রূপ-রস-গন্ধ, হাসি-কান্না, দুঃখ-বেদনা, শোক-আনন্দ ইত্যাদি আবেগে সিক্ত ব্যঞ্জনাময় অল্প কথায় অনেক বড় গল্প বা ইতিহাস বা ভাবের সাগর। কবিতা যেমন বোধগম্য ভাবের প্রকাশ করে, একই সাথে কবিতাকে অনুভবও করতে হয়। তাইতো বলতে হয় কবিতা হলো প্রমূর্ত ও বিমূর্ত ভাব প্রকাশের এক মোক্ষম নান্দনিক ভাষা।