যদি বাস্তবের স্পেসশিপ গ্যালাক্সি থেকে গ্যালাক্সিতে ঘুরে বেড়ায়, তবে আমি জীর্ণ কুটিরে বসে স্বপ্ন দেখি, কল্পনায় ভাসি, অবচেতনের ভেলায় চড়ে শুধুই উড়ছি আর উড়ছি ছায়াপথ হতে ছায়াপথে । এ ভেসে চলা অনন্তে, মাল্টিইউনিভার্স বা বুদবুদ মহাবিশ্বে (ইউনিভার্স থেকে ইউনিভার্সে) কিংবা প্যারালাল ইউনিভার্সে।

ধরুণ আপনি খাটে বসে আছেন, সামনের দেয়ালটা আপনার জীবনের ভবিষ্যৎ দেখার স্ক্রীন হয়ে উঠলো । স্ক্রীনটিতে একের পর এক দৃশ্য ভেসে উঠছে আপনার ভবিষ্যৎ জীবনের । অথচ বাস্তবে সেটি একটি দেয়াল । কিংবা ধরুণ, অবচেতনে একটা অদেখা স্বপ্ন, সে স্বপ্ন সবাই দেখতে পারে না, এ ছাড়া স্বপ্নের ব্যাখ্যা হঠাৎ করে হয়না । আপাত দৃষ্টিতে সেই স্বপ্নটা কয়েক মুহুর্তের, কিন্তু ব্যাপ্তি রাতভর।

মানুষের রয়েছে চিন্তা ও অকল্পনীয় কল্পনা করার ক্ষমতা, যা বস্তুজগতের অন্য কারো নেই । এ কল্পনা দিয়ে এক একজন মানুষ এক একটা আলাদা জগৎ সৃষ্টি করতে পারে । এ জগতে নিজের পাশাপাশি চিন্তায় প্রভাব ফেলা মানুষও থাকে আশেপাশে।

পরাবাস্তবতা কথাটির সাথে এ শতাব্দীর বেশিরভাগ শিক্ষিত মানুষই বোধহয় কম বেশি পরিচিত । প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ডাডাবাদী (Dadaism) কর্মকান্ডের উপর ভিত্তি করে পরাবাস্তববাদ বিকশিত হয়েছে । এ মতবাদের মূলকথা অবচেতন মনের ক্রিয়াকলাপকে উদ্ভট ও আশ্চর্যকর সব রূপকল্প দ্বারা প্রকাশ করা ।  ডাডাবাদীরা যেখানে চেয়েছিলেন প্রচলিত সামাজিক মূল্যবোধ নস্যাৎ করে মানুষকে এমন একটি নান্দনিক সৃষ্টির অধিকারী করতে যার মাধ্যমে সে ভেদ করতে পারবে ভন্ডামী ও রীতিনীতির বেড়াজাল, পৌছতে পারবে বস্তুর অন্তর্নিহিত সত্যে; সেখানে পরাবাস্তববাদ একধাপ এগিয়ে বলল, প্রকৃত সত্য কেবলমাত্র অবচেতনেই বিরাজ করে (একে এক ধরণের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বলা যায়) । পরাবাস্তববাদী শিল্পীর লক্ষ্য হলো তার কৌশলের মাধ্যমে সেই সত্যকে গভীর থেকে তুলে আনা।

১৯২০ সালের দিকে ফ্রান্সের প্যারিস থেকে surrealism আন্দোলনের সূচনা এবং এ আন্দোলনের মূল উদ্গাতা ফরাসি পুরুষ কবি-সমালোচক আঁন্দ্রে ব্রেটন । তখন থেকেই পরাবাস্তবতা ঢুকে পড়ে বিভিন্ন দেশ ও ভাষার visual arts, literature, film, music ইত্যাদিতে । এ মতবাদ রাজনৈতিক চর্চা, দর্শন ও সামাজিক তত্ত্বেও ঢুকে পড়ে । মূলত, পরাবাস্তববাদ বিংশ শতাব্দীর একটি প্রধানতম কাব্য আন্দোলন এবং পরাবাস্তবতা উত্তরাধুনিক কবিতার একটি বৈশিষ্ঠ্য । আঁন্দ্রে ব্রেটন বলেছিলেন – “বিস্ময়কর তা সব সময়ই সুন্দর।” অন্যদিকে অবাক হওয়া ও অবাক করার মূলধন নিয়ে গিওম আপলেনিয়ের লিখেছিলেন পরাবাস্তব কবিতা । অবাধ অনুসঙ্গ ও অবচেতন পরাবাস্তব কবিতার বৈশিষ্ট্য । যতি চিহ্নহীনতাও এ কবিতার একটি বৈশিষ্ট্য।

বিংশ শতাব্দীর অভিনব সাহিত্য উপাদান হচ্ছে surrealism বা পরাবাস্তবতা । মানুষের মনের চেতন ও অচেতন অবস্থার উর্ধ্বে যে একটি অবচেতন বিরাজ করে সে অবচেতনের গভীর থেকে উঠে আসা বাস্তবের অধিক বাস্তব আপাত অবাস্তবই পরাবাস্তবতা । অবচেতন মনের কর্মকান্ড নিয়ে কল্পনানির্ভর সাহিত্য হচ্ছে পরাবাস্তব সাহিত্য । পরাবাস্তবতা কিছু ধারণার জন্ম দিয়েছে, যেমনঃ অবচেতন, লুপ্ত স্মৃতি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা, মোট কথা বিধি, নিয়ম ও যুক্তিতর্কের গন্ডির বাইরে গিয়ে অবচেতন মনকে রূপায়িত করা । এক্ষেত্রে কবিকে হতে হবে দ্রষ্টা, সে শুধু ভবিষ্যত দেখবে না, দেখবে নিজের অন্তঃকরণ, ছায়া, মগ্নচৈতন্য যা হৃদয় খুঁড়ে জাগাবে বেদনা, স্বপ্ন, দুঃস্বপ্ন, ললাটলিপির মতো যুক্তিহীনতা (অন্য দেশের কবিতা, সূনীল গঙ্গোপাধ্যায়) । দৃশ্য থেকে অন্যদৃশ্যে অবাধ যাতায়াত পরাবাস্তব কবিতার অন্যতম বিশেষ বৈশিষ্ট্য । কবি অবচেতনের একেবারে গহীনে ঢুকে জড়ো হওয়া সব ভাবনা কুড়িয়ে পকেট ভর্তি করে, যে ভাবনাগুলোর সাথে পাঠক আগে পরিচিত নন, এমনকি সেসব ভাবনা পাঠকের চেতনা বা বোধের বাইরে ছিল ।

শিল্পে মানুষের আন্তঃজীবনের প্রকাশ সবসময়ই নিজস্ব স্থান দখল করে আছে । পরাবাস্তববাদের ফলে তা আরো উজ্জ্বল সত্য হয়ে ধরা দিল। স্পষ্ট হয়ে উঠল, শিল্প কেবল বহির্মূখী জীবনের গাথা নয়, অন্তর্জগতের আবিষ্কারেরও অন্তঃস্বরূপ। ব্রেটন বললেন 'ভাবনার যথার্থ পদ্ধতি অনুধাবনের জন্য পরাবাস্তবতা আবশ্যক।' জীবনের প্রধান সমস্যাবলীর সমাধান ও তার হাতে নিহিত পরাবস্তবতাই এক শ্রেণীর সাহিত্যিকের আরাধ্য হয়ে উঠলো। যৌক্তিকতা স্থান করে নিল শঙ্কা। "সামাজিক সঙ্কট, সমাজে দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত শ্রেণীচেতনা এবং যৌনমূল বোধের পরিবর্তন ঘটানোর শৈল্পিক চিন্তা নিয়ে বিশ শতকের প্রথম দিকে  ‘surrealism’ বা 'পরাবাস্তবতা'র কাব্যরীতির (শিল্পরীতি) উদ্ভব ও বিকাশ। এতে যেন রয়েছে রোমান্টিকতা ও বাস্তবতার আধুনিক প্রেক্ষাপটে মিলন। ব্যক্তিক ও সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতের মত প্রচলিত চিন্তা ও ফর্মের মুক্তিই ছিল পরাবাস্তবতার মূল কথা।" (আহমদ রফিক, কবিতা আধুনিকতা ও বাংলাদেশের কবিতা, পৃষ্ঠা-৭৫, অনন্যা, ঢাকা)।

ফরাসী সাহিত্যিক গিওম আপলেনিয়ের (১৮৮০-১৯১৮) ১৯১৭ সালে প্রথম 'সুরিয়ালিস্ট' শব্দটি ব্যবহার করেন তার 'টাইরেসিয়াস-এর স্তন' নাটক সম্পর্কে । কবিতার পরাবাস্তবতার সূচনায় রয়েছেন জ্যাঁ আতুর  রেবোঁ (১৮৫৪-৯১), জেরার দ্য মেরভাল (১৮০৮-৫৫) প্রমুখ। শতাব্দীর সূচনায় সিগমুন্ড ফ্রয়েড তার 'নব্য মনোঃসমীক্ষণ' তত্ত্ব প্রচার করার ফলে পরাবাস্তবতার আহরণ কেন্দ্র উন্মোচিত হয়।

আধুনিক বাংলা কবিতায় সম্ভবত তিরিশের কবিদের মধ্যে বিষ্ণু দে’র ‘ঊর্বশী ও আর্টেমিস’ কাব্যগ্রন্থে প্রথম surrealism এর অভিপ্রকাশ ঘটে । তবে, জীবনানন্দ দাশের সূত্রেই ‘পরাবাস্তববাদ’ আধুনিক বাংলা কবিতায় পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা পায়। এছাড়াও, বুদ্ধদেব বসু, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, ধুর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, অমীয় চক্রবর্তীও বাংলা পরাবাস্তববাদ সাহিত্য ধারায় বিচরণ করেছেন চরম সার্থকতায়। বাংলা সাহিত্যে ঠিক পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে এসে আবদুল মান্নান সৈয়দের হাত ধরে ‘পরাবাস্তবতা’ নামের পাখিটি পূর্ণ যৌবন প্রাপ্ত হয়ে বাংলা কবিতার আকাশে বিস্তীর্ণ ডানা মেলে উড়েছিল ঈর্ষনীয়ভাবে । মূলত, ত্রিশোত্তরকালে বাংলা সাহিত্যে ইউরোপীয় ভাবধারার যে জোয়ার বয়ে গিয়েছিল; সে জোয়ারে তরণীর সফল মাঝি ছিলেন আবদুল মান্নান সৈয়দ ।

সৈয়দ আলী আহসান (১৯২২-২০০২), শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, শহীদ কাদরী, আবিদ আজাদ, নাসির আহমেদ, সুজাউদ্দিন কায়সার, রেজাউদ্দিন স্টালিন, তপন বাগচী, জাকির আবু জাফর, সমীর রায়চৌধুরী, রবীন্দ্র গুহ, সিকদার আমিনুল, মাদল হাসান, ফেরদৌস মাহমুদ, বিজয় আহমেদ, আমজাদ সুজন প্রমুখ কবিসহ চলতি দশকের অনেক কবির রচনার মধ্যেও 'পরাবাস্তবতার' লক্ষণ দেখা যায়।

কিন্তু, বাংলাদেশে, আঁন্দ্রে ব্রেটন(Andre Breton), পল এলুয়ার(Paul Eluard), লুইস আরাগঁ(Louis Aragon), অঁরি মিশো(Henri Michaux), গার্সিয়া লোরকা(Garcia Lorca), সালভেদর দালি(Salvador Dali) প্রমুখ কবি-লেখকের এ-তত্ত্ব বা দর্শন বা আন্দোলন সম্প্রতি কোনো কোনো দার্শনিক সম্প্রদায় কর্তৃক সমালোচিত হচ্ছে। যেমন দৃষ্টান্তবাদীরা পরাবাস্তববাদীদের অবচেতনমন(Subconscious mind) সম্পর্কীয় ধারণাকে গ্রহণ করছেন না। তারা বলছেন, অবচেতনমনের ক্রিয়াকর্মকে নির্বিচারে গ্রহণ করলে, এ-অত্যাধুনিক যুগেও, সাহিত্য ও দর্শন চর্চায় দৈব বা ভৌতিক সত্তা তথা উদ্ভট-আশ্চর্যকর-অবাস্তব রূপকল্প হাজির হয়ে যায়। তারা ঘুমের ভেতরে পাওয়া স্বাপ্নিক তথ্যেরও যৌক্তিক উপস্থাপন দাবি করছে। প্রকৃত সত্য কেবলমাত্র অবচেতনেই বিরাজ করে-পরাবাস্তববাদীদের এ-ধরনের দৃঢ়নিশ্চয় কথার বিরোধিতা করে বলছেন, প্রকৃত সত্যের অনুভব চৈতন্যে বিদ্যমান এবং সাহিত্য এ-চৈতন্যেরই চারু উচ্চারণ। Littérature জার্নালে, পরাবাস্তবাদী লুই আরাগঁ ও ফিলিপ সোপল্টের (Philippe Soupault) প্রস্তাবিত অটোমেটিক রাইটিং (Automatic Writing)-এরই বিরোধিতা করে তারা বলছেন, কবি শুভবোধ বজায় রেখে অনিয়ন্ত্রিত বা স্বেচ্ছাচারী থাকবেন, কিন্তু দ্রুততার সাথে যা কিছু মনে আসবে তা লিখে সাহিত্য বলে চালিয়ে দিয়ে সমাজকে নৈরাজ্যিক এবং সাহিত্যকে বেদরকারী পাঠে পরিণত করবেন না।

পরাবাস্তববাদী কবিতা প্রতীক ও বাকপ্রতিমার রূপৈশ্বর্যগত গুণগ্রাম ধারণ করেও ভাষার জাদুকরি ব্যবহারের তুলনায় মানব কল্পনাশক্তির ওপর গুরুত্বারোপ করেছে বেশি। এ ধরনের স্ববিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে পরাবাস্তবতা লক্ষ্যের চেয়ে পদ্ধতিকে প্রধান করে তুলেছে। কল্পনাশক্তির উৎসের দিকে ফেরা তার কাছে ছিল অতীব তাৎপর্যপূর্ণ যেখানে চৈতন্যের পুনরুজ্জীবন ঘটে এবং কবিতা বা ছবির সৃষ্টি ওই উজ্জীবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে হয়েছে।'' (আহমদ রফিক, কবিতা আধুনিকতা ও বাংলাদেশের কবিতা, অনন্যা, ২০০১)।

কয়েকটি পরাবাস্তব বাংলা কবিতাঃ

(১)
চিৎকারের নিচে প’ড়ে আছে আমাদের শাদা শহর- তার পিঠ, কাঁধ, গ্রীবা, উরু,
জানুঃ একফোটা আস্বচ্ছ বিহ্বল নীল শিশির সময়ের সবুজ পাতায় । কল্যাণে,
জলের মতো, আমাদের মাথার উপরে প্রতীক্ষায় । ছোটো দিনঃ- পাশের বনে
শব্দ নেই, শহরে হাওয়া নেই, শহরে একটা মূর্ছা । চটের মতো চোখ বেঁধে
নিয়েছে কুয়াশা মানুষের-মানুষের ।
(পরস্পর, জন্মান্ধ কবিতাগুচ্ছ, আবদুল মান্নান সৈয়দ)

(২)
কী চড়া বাজার ! আমাদের পাশের লোকটির সত্যি-সত্যি গলা কেটে নিল চীনে
প্লেটের উপর এক গাঢ় দোকানদার । এরকম প্রমাণ আমি কখনো দেখিনি ।
তারপর করল কি ? না, তার কাটা-মুন্ডু ঝুলিয়ে দিল দোকানের
উইন্ডোর নিচে
বিজ্ঞাপনে টপাটপ । নেমে এলাম ঘোর রাস্তায় ।
(সমস্ত ভাসান দিলাম সমস্ত উড়াল, জন্মান্ধ কবিতাগুচ্ছ, আবদুল মান্নান সৈয়দ)

(৩)
হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে ।'
(বনলতা সেন, জীবনানন্দ দাশ)

(৪)
'সমুদ্রের দীপ্ত কলোল্লাস, দূরাগত হয়ে যেন
রাত্রির বিবরে আজ তুলেছে গুঞ্জন।'
'সেখানে ঘাসের পাতা ঘুমের মত
অজস্র পাতার ফাঁকে হৃদয়ের নদী হয় চাঁদ নেমে আসে।'
'কখনো নিকটে নও, তবু তুমি রাত্রির মতন'
'সূর্যের রূপার রঙে ঝলমল করিছে প্রহর
নিম্নে দিকচিহ্নহীন সুপ্তি মগ্ন মেঘের প্রান্তর।'
(অনেক আকাশ, সৈয়দ আলী আহসান)

(৫)
জানতাম তোমার চোখে একদা জারুলের বন
ফেলেছে সম্পন্ন ছায়া, রাত্রির নদীর মতো শাড়ি
শরীরের চরে অন্ধকারে জাগিয়েছে অপরূপ।
(কোন পরিচিতাকে, প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে, শামসুর রাহমান)

(৬)
নদীর ভিতরে যেন উষ্ণ এক নদী স্নান করে।
তিতাসের স্বচ্ছ জলে প্রক্ষালণে নেমেছে তিতাসই।
নিজের শাপলা লয়ে খেলে নদী নদীর ভিতরে
ঠাট্টা বা বিদ্রূপ নেই, নেই শ্যেনচক্ষু, নেই চারণের বাঁশি।
(নদীর ভিতরে নদী, নদীর ভিতরে নদী, আল মাহমুদ)

(৭)
শুনেছি জ্যোৎস্না শুধু ধ্যান মৌন পাহাড়ের চূড়ায় কোনো
ত্রিশুলদেহ একাকী দরবেশ কিংবা হিমালয়ের পাদদেশে,
তরাই জঙ্গলের অন্ধকারে, ডোরাকাটা বাঘের হলুদ শরীর নয়,
বরং ঘরের ছাদ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে পোষমানা পায়রা তখন ওড়ে,
তখনও জন্মায় জ্যোৎস্না; ঝ'রে পড়ে গৃহস্থের সরল উদ্যানে।
(একবার দূর বাল্যকালে, শহীদ কাদরী)

(৮)
পাড়াগার জ্যোৎস্না নদীর মতো বয়ে যাওয়া, পূর্ণিমা রাত্রির
নিঃসঙ্গ কালভার্টের ওপর রাম দা নিয়ে বসে থাকা ডাকাত দলের ছায়া
শাহাজাদীর সাদা পরিধেও বস্ত্রাদির মতো সাপের ছলম,
গঞ্জের সন্ধ্যায় বাজারের মুখে শুয়ে থাকা
অর্ধ পঙ্গু দুটি ভিখারির ভাগাভাগি করা সান্ধ্য জ্যোৎস্না.. ।
(আমাদের কবিতা, আবিদ আজাদ)

(৯)
এখন ডানায় তোর না লাগে রোদ্রের ছায়া,
না কোন অরণ্যেরও সবুজ দ্রাঘিমা
কেবল ধূসর আর খরার এক বিরান ভূভাগে
ভ্রান্ত পথচারী তুই যেন বেদুইন
স্বপ্নাহত হেটে যাবি আজীবন তৃষ্ণার মরুতে ।
(স্বপ্নাহত কিশোরের প্রতি, নাসির আহমেদ)

(১০)
রাত্রির তৃতীয় প্রহরে আমার ফাঁসি
শেষ সংবাদটি জানবার জন্য সাথিদের চোখে মুখে
বৃষ্টিগর্ভ বায়ুর উদ্বেগ, আমার মৃত্যু তাদের চোখের
আকাশে হয়তো বসিয়ে দিয়েছে অসংখ্য বেদনার শিশির
যা ভালোবাসার রোদে মুক্তোর মতো ঝিকমিক করে উঠবে।"
(ফাঁসির মঞ্চ থেকে: বেঞ্জামিন মলয়েস, রেজাউদ্দিন স্টালিন)