ক'দিন ধরেই বুকের বাঁ পাশটায়
চিন চিন করে হচ্ছিল ব্যাথা।
থেকে থেকেই বাড়ছিলো অস্থিরতা।
জীবনে না পাওয়া গুলো কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিলো।
চোখের সামনে শূন্যতাগুলো কেবলি ভাসছিলো।
তবুও থেমে থাকেনি, বলতে গেলে থামতে দেয়নি
জীবনের ব্যস্ততা আর যত কাজ।
মাঝে মঝে ব্যথাটা প্রকট হলে,
দুঃশ্চিন্তা বাড়তো, কপালে পড়তো ভাঁজ।
ডাক্তার দেখিয়ে ছিলাম,পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে
বললেনঃতেমন কিছু না, নেই কোন দুর্ভাবনা।
আমিও ভাবলাম হবে হয়তো,
জীবন থাকলে -
এমন একটু আধটু অমুলক নয়তো।
হঠাৎ এক সন্ধ্যায় বাড়ছিলো ব্যথা।
ব্যথার চোটে, মুখে সরছিলোনা কোন কথা।
ভাবলাম একটু নেই বিশ্রাম,হয়তো পবো আরাম।
তাই কাজ গুলো ফেলে -
সন্ধ্যা রাতেই চলে এলাম বাড়ী।
পরিবারের অতি আদরের মানুষগুলো নিয়ে-
খাওয়া- দাওয়া সারলাম তাড়াতাড়ি।
ডাক্তারের দেওয়া নির্দেশ মতো
খেলাম ক'টা বড়ি।
তাড়াতাড়ি গেলাম বিছানায়।
বন্ধ হয়ে আসছিলো দম
ব্যথার প্রচন্ডতায়।
তার পর পুরোটাই অসহায়।
আমি বুঝতে পারলাম,পৃথিবী থেকে নিচ্ছি বিদায়।
হঠাৎ ই বদলে গেলো সব স্বপ্নের মতো।
আমি দেখছি-
আমার শরীরটা পড়ে আছে নিঃশব্দ, নিথর।
চোখজোড়া তখনো খোলা।
প্রচন্ড কষ্টে মুখটা হয়ে আছে 'হা'!
কিছু বুঝতে না পেরে-
বিছানায় শুয়ে থাকা দশ বছরের মেয়েটা
চিৎকার দিয়ে উঠে-" বাবা"!
তার চিৎকারে ছুটে আসে তার মা।
বিকট শব্দে সেও কাঁদতে থাকে
গগণবিদারী কান্না।
ছুটে আসে আপন জনেরা।
বাইরে রাত্রির অমানিশা।
বাইরে বাড়তে থাকলো মানুষ জনের ভীড়।
হাজারো জিজ্ঞাসা,কেউ কেউ প্রকাশ করছে
আমায় নিয়ে তাদের যতো আশা কিংবা
আমার কাছে শোনা সব হতাশা।
আমায় ক'জন ফেরেশতা শূন্যে ধরে রেখেছে।
ওরা বলছেঃতোমার আর যাওয়া হবেনা।
ওদের বিগলিত করেনা আমার স্বজনদের কান্না।
এমনি ভাবে কাটে রাত,জাগে ভোরের পূর্বাভাস।
মসজিদে আযান বলেন মুয়াজ্জিন।
এর কিছু পরেই পাশাপাশি মসজিদগুলো থেকে
ভেসে আসে আমার চলে যাওয়ার ঘোষণা।
কেউ শোনে, কেউ শোনেনা
কেউ বুঝে, কেউ বুঝেনা।
সকাল বাড়ার সাথে সাথে, বাড়ে মানুষের ভীড়।
পরিবেশটাই যেন হয়ে উঠে অস্থির।
আমার পড়ে থাকা শরীরটার অনতি দূরে
চলে কত আলোচনা, কত সমালোচনা।
আমার শুধু চেয়ে থাকা।
কোন কিছুই বলা হয়ে উঠেনা।
যে যার মতো বলছিলো
কেউই বুঝলো না
আমার চলে যাওয়ার নিদারুন যন্ত্রনা।