হতে পারত,
আজ আমি আপনাদের মত সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম নিয়েছি কোন সম্ভ্রান্ত ঘরে,
নরম তুলতুলে তোয়ালের ভাঁজে আমায় বুকে জড়িয়ে কপোলে, মুখে, চিবুকে চুমুর চিহ্ন এঁকে দিচ্ছেন মা।
আমায় বুকে নিয়ে গর্ব করে বাবা বলছেন- তুই আমার লক্ষী সোনা। আমার অন্ধকার ঘরের প্রদীপ শিখা। নয়নের তাঁরায় তুই যে আমার অালোর ঝিলিক।
অথবা মন্দভাগ্য হলেও হয়ত
হতে পারত-
কোন গরীবের কুঠিরে আমার আগমনে বয়ে যেত আনন্দের বন্যা। ছেড়া কাঁথায় আমাকে জড়িয়ে এই কনকনে শীতে জননী আমার নিজের কাঁপছেন। বাবা বুকের মাঝে আগলে রেখেছেন মা ও আমাকে।
এ ভালাবাসা অকৃত্রিম। ফরমালিন মুক্ত সম্পুর্ন স্বাস্থ্যসম্মত।
কিন্তু দেখুন-
আজ আমি আমার জনক জননীর ক্ষণিকের লালসা পুরনের কলঙ্ককে বহন করে, শুয়ে আছি ডাস্টবিনের পঁচা ও অর্ধগলিত আবর্জনা স্তুপের ভিতর। এক টুকরো ছেঁড়া কাঁথাও জোটে নি আমার ভাগ্যে। হয়ত একটু পড়ে কোন নেকড়ে কিংবা কোন কুকুরের শিকারে পরিণত হব, আমি।
এই অন্তিম ক্ষণে মহান সৃষ্টি কর্তার কাছে প্রশ্ন আমার-
তুমি তো ন্যায় বিচারক,
এ তোমার কেমন বিচার, হে আমার প্রতিপালক?
কেন এই দুনিয়ার সুন্দর আলো দেখবার আগে নিভিয়ে দিচ্ছ আমার জীবনের আলো?
কেন তুমি আমার বাবা মায়ের নষ্ট কিছু সময়ের ভ্রষ্ট কর্মফল হিসেবে আমাকেই বেচে নিলে?
কি অপরাধ ছিল আমার?
সময় ঘনিয়ে এসেছে, নেকড়েটা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে আমার দিকে। অন্যদিকে ময়লার দুর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসছে।
হয়ত আমার সময় ফুরিয়ে আসছে।
বাবা,
তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। একটু খানি আদর পেতে ইচ্ছে করছে, বাবা।
বিশ্বাস কর বাবা,
তোমাদের প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই। আমি জানি তোমরা শুধু নিজেদের একটু খানি সুখের জন্য আমাকে বলিদান করেছ।
তবুও এই মৃত্যু আমার জন্য সুখের হত,
যদি তোমাদের বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে পারতাম।
মা,
তুমি কোথায়, মা? আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে, মা।
মায়েরা নাকি সন্তানের জন্য নিজেকে উৎস্বর্গ করতে পারে, তুমি আমার কেমন মা? আমকে এখানে ফেলে রেখে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছ?
নেকড়ে টা আমার দিকে তেড়ে আসছে, আমার খুব ভয় করছে, মা।
আমাকে বাঁচাও, মা। আমার খুব বাঁচতে ইচ্ছে করছে।
তোমাদের আমি কথা দিচ্ছি - কারো কাছে নিজের পরিচয় দিব না। শুধু আমি এই সুন্দর পৃথিবীতে কয়েকটা দিন বাঁচতে চাই।
আমাকে এক ফোঁটা পানি দিবে?
মা, তুমি কি আমার আমার আর্তনাদ শুনতে পারছো?
আমি তোমার অবৈধ সন্তান!
আমি ডাস্টবিন থেকে বলছি, মা।।
কুড়িগ্রাম
০২/০৭/২০২০ ইং