▪ মাইকেল মধুসূদন দত্তের সনেট/চতুর্দশপদী কবিতাঃ-
আধুনিক বাংলা কাব্যের জনক কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩) সর্বপ্রথম বিদেশি সাহিত্যের সনেট প্রকরণটি বাংলায় আমদানী করেন। তিনি সনেটের জন্মদাতা পেত্রাকের এবং শেক্সপীয়র উভয়ের প্রকরণ ধারণ করেছিলেন। ১৪ অক্ষর সমন্বিত, ১৪ পংক্তিতে সমাপ্ত, অষ্টক ও ষষ্টকের পর্ব ভাগের নিয়মকে ধারণ করে পংক্তিসমূহের মেলবন্ধনের রীতিকে রক্ষা করে মধুসূদন দত্ত সনেটকে বাংলা ভাষায় জনপ্রিয় করে তোলেন। ‘বঙ্গভাষা’, ‘কপোতাক্ষ নদ’, ‘সায়ংকালের তারা’ ইত্যাদি সনেটে কবি মধুসূদনের ভাব কল্পনা অখন্ড ভাবমূর্তিতে প্রকাশ পেয়েছে।
সনেট বাংলা ভাষায় ‘চতুদর্শপদী কবিতা’ হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। মধুসূদনই ‘বাংলা চতুর্দশপদী’ কবিতার পথিকৃৎ। সনেটের সনাতন রীতি সম্পূর্ণ না মানলেও মধুসূদনের সনেট সার্থকতা অর্জন করেছে। ইংরেজি সাহিত্যে তার সনেট সংখ্যা ১৮টি। তিনি বাংলা ভাষাতে মোট ১০৮টি সনেট রচনা করেছেন।
মধুসূদনের সাহিত্য চর্চার আটশো বছর আগে বাংলা সাহিত্যে কাহিনী কাব্য থাকলেও তা সুপ্রথিত, ব্যক্তি ও কাল চিহ্নিত বহুমাত্রিক মহাকাব্য ছিল না। মধুসূদনই প্রথম সার্থক মহাকাব্য উপহার দেন বাংলা সাহিত্যমোদীদের। আরো উপহার দেন চতুর্দশপদী কবিতার ঘনসংহতি। অন্য দুটি প্রকরণ যেমন নিঃসঙ্ঘ দ্বীপ হয়ে সাহিত্য সাগরে দাঁড়িয়ে আছে, তাঁর প্রবর্তিত সনেট কিন্তু তা হয়নি বরং প্রবাহমান নদীর মত বহমান। একশো তেঁতাল্লিশ বছর পরও সচল রয়েছে মধু প্রবর্তিত সনেটের পরিচর্চা।
মধুসূদন ব্যক্তি জীবনে শক্তির উল্লাস যতই অনুভব করুন না কেন, এর সাথে শক্তির সীমিত রূপও উপলদ্ধি করেছেন। প্রচ- শক্তি বলে, সমস্ত জীবনব্যাপী তিনি আত্মপ্রতিষ্ঠার যে প্রাণপণ প্রয়াস করেছেন আদৌ সার্থক হয়নি। এর বিরুদ্ধে শক্তির কাছে তাকে হার মানতে হয়েছে।
মধুসূদন হয়তো ভেবেছিলেন তার পরিবারের সবাই ওকালতি পেশার সঙ্গে জড়িত তিনি তাদের সবাইকে অতিক্রম করে যাবার আশায় প্রায় মধ্যবয়সে ব্যারিস্টারি পড়তে ইংল্যান্ড চলে যান। কিন্তু সেখানে তিনি তেমন সুবিধা করতে পারলেন না। জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করাই তার পক্ষে দুরূহ হয়ে উঠলো। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে তিনি চলে গেলেন লন্ডন থেকে ফ্রান্সে। ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে কঠোর দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করেই তাকে জীবন নির্বাহ করতে হলো। সেই সময় ইতালীয় কবি পেত্রার্ক এর অনুকরণে সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতা রচনা আরম্ভ করেন। ভাবতে অবাক লাগে এমন একটি বিরূপ অবস্থানে থেকেও কি করে সনেটের মত শিল্প সংযত কবিতা রচনা করেছিলেন। জীবেন্দ্র সিংহের মতে ‘মধুসূদনের এক গভীরতম উপলব্ধির দিনে চতুর্দশপদী কবিতাবলী’র সৃষ্টি। বিশ্ব সাহিত্যের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় সনেট হলো সেই কবিতা যা কবির হৃদয় উদঘাটনের একটি স্বীকৃত মাধ্যম। জীবনে যে ঢেউ উঠে, মনে যে সুর জাগে সনেটের সীমিত পরিসরে তার নিটোল রূপ রচনা করেন কবি।
‘মেঘনাদ বধ কাব্যে’র মহাকবি মধুসূদন ফ্রান্সের ভরসেল্স নগরীতে থাকার সময়ে মর্মান্তিক দুঃখের আঘাতে উপলদ্ধি করেছিলেন যে, অন্তরের দৃঢ়মূল প্রত্যয় পায়ের তলার শক্ত মাটির মতোই যা অপরিহার্য তা তিনি অর্জন করতে পারেননি। যৌবনা বেগে তিনি স্বপ্ন দেখেছেন অকারণ, অবারণ উল্লাস পেতে চেয়েছেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন রঙিন জীবনের প্রজাপতি পাখা শুধুই ক্লান্তিতে ভরে উঠেছে, তাকে ঘাটের বদলে আঘাটায় পৌঁছে দিয়েছে। তাই সেদিন আপন জন্মভূমিকে যেন মধুসূদন নতুন করে দেখলেন, চিনলেন ও জানলেন। তার দৃষ্টি ফিরলো দেশের দিকে দেশের মৃণ্ময় সত্তা আর চিন্ময় ঐতিহ্যের দিকে। এই নতুন করে আত্মউপলদ্ধির পরিচয়, এই স্বদেশ আবিষ্কারের পদচিহ্ন ছাড়িয়ে আছে চতুর্দশপদী কবিতাবলীতে। কবির মন যে মাতৃভূমি থেকে একদা ছিন্নমূল হয়েছিল, তাকে তিনি শুধু শিল্পের ভিতরে নয়, জীবনের ভেতরে প্রত্যয় রূপে স্বীকার করে নিলেন। তাই কাব্যটিকে আত্মজীবনীমূলক বলা যেতে পারে। পাশ্চাত্য শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি এত মাস পরে মধুসূদনকে দেশ চিনিয়েছে, মাতৃভূমিকে ভালবাসতে শিখিয়েছে নতুন করে।
স্বীয় অন্তর অনুভবকে নতুন প্রত্যয়ে প্রকাশের জন্য মধুসূদন বেছে নিলেন সনেটের মত শিল্প সংযত কবিতা। ব্যক্তিগত জীবনের নানা উত্থান-পতন, ঝড়-ঝঞ্ঝার মধ্যে সনেটের চেয়ে অন্য কোন মহত্ত্বর শিল্প কৌশলে যাওয়া তখন মধুসূদনের পক্ষে প্রায় দুরূহ ব্যাপার ছিল। তার উপরে তিনি ব্যারিস্টারিতে অধ্যয়নরত ছিলেন। নিজের এই অক্ষমতার কথা কিছুটা হলেও স্বীকার করেছেন ‘সমাপ্তি’ কবিতায়। ‘সমাপ্তি’ কবিতায় তিনি লিখেছেন-
বিসর্জিব আজি, মাগো | বিস্মৃতির জলে
(হৃদয়-মন্ডপ, হায়, | অন্ধকার করি)
ও প্রতিমা। নিবাইল | দেখ হোমানলে,
মনঃকুম্ভে অশ্রুধারা | মনোদুঃখে ঝরি!
এতে বুঝা যায় মধুসূদন নিজের ক্ষয়িষ্ণু সৃষ্টি শক্তি ও আস্তায়মান প্রতিভা সম্বন্ধে সচেতন হয়ে উঠছিলেন। সে কারণেই তিনি বলছেন নিভে গেছে হোমানল, এ হোমানল মূলত তার সৃষ্টির হোমানল। একদা যৌবনের অমিত তেজে অধম্য উল্লাসে অনায়াসে বিচরণ করেছেন কাব্য অঙ্গনে আজ নিয়তির অদৃশ্য আঙ্গুলি হেলনে তিনি যেন অস্তমিত সূর্য তার সৃষ্টির আবেগ স্তিমিত মনঃকু-ে অশ্রুধারা মনোদুঃখে ঝরি। এই মনোদুঃখ তাকে তুষের অনলের মত পুড়িয়ে নিঃশেষ করে দিয়েছে। এর পরে তিনি আর কোন পূর্ণাঙ্গ কাব্য রচনা করেননি অথবা করতে পারেননি।
শিল্পকর্ম হিসেবে তাই চতুর্দশপদী কবিতাবলীও সর্বোচ্চ প্রশংসার শীর্ষে উঠতে পারেনি ঐ দুর্বলতার কারণেই। কবির ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ নিশ্চয়ই মূল্যবান কিন্তু তার চেয়েও মূল্যবান সৃষ্টি সাহিত্যিক মূল্য। সাহিত্যিক মূল্যই সাহিত্য সৃষ্টির চরম মূল্য। কবিত্ব; কল্পনা রসানুরাগ থাকা সত্ত্বে তার সব সনেট উপভোগ্য হয়নি। সনেটের যে আঙ্গিক তাতে মধুসূদন অত্যন্ত সার্থকতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি প্রথম আট পঙ্ক্তিতে দুটোর বেশি মিল দেখাননি যেখানে দেখিয়েছেন (কাশীরামদাস) সেখানে একটু ভিন্নতর পন্থা অবলম্বন প্রবল হয়ে উঠেছে। মদুসূদনের বড় কৃতিত্ব তিনি সনেটের ছাঁচটি ধরতে পেরেছিলেন। চৌদ্দ চরণের আঁটসাঁট শক্ত-সমর্থ কায়ারূপের মধ্যে, নিটোল মুক্তরূপের মধ্যে গভীরভাবের প্রাণটি তুলে ধরার কৌশল আয়ত্ব করতে পেরেছিলেন। যেখানে ভাব তার সহায়, সেখানে (বিজয়াদশমী, সমাপ্তে, কপোতাক্ষ নদ, বঙ্গভাষা, সীতাদেবী ইত্যাদি সনেট) তিনি যথার্থই সার্থক।
যেমনঃ-
যেয়ো না, রজনি, আজি | লয়ে তারা দলে!
গেলে তুমি, দয়াময়ী, | এ পরাণ যাবে!
উদিল নির্দ্দয় রবি | উদয়-অটলে,
নয়নের মনি মোর | নয়ন হারাবে!
(বিজয়া দশমী)
হে বঙ্গ, ভান্ডারে তব | বিবিধ রতন,
তা সবে (অবোধ আমি!) | অবহেলা করি,
পর-ধন-লোভে মত্ত, | করিনু ভ্রমণ
পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি | কুক্ষণে আচরি।
(বঙ্গভাষা)
তবুও চতুর্দশপদী কবিতাবলী মধুসূদনের কবি প্রতিভার সার্থকতম সৃষ্টি নয়। পেত্রাক, মিল্টন, সেক্সপিয়ার এর সনেটে যে বিষয় গরিমা আছে, যে ভাব মহিমা আছে, মধুসূদনের অনেক চতুর্দশপদীতেই তা অনুপস্থিত।
শোক-দুঃখের তাপে মধুসূদনের মনটা ঠিক সনেট রচনার অনুকূল ছিল না তাই অনেক সনেট শুধু গদ্যাত্মক, কাব্যের ভঙ্গি আছে কিন্তু প্রাণ নেই মড়ার মুখে আল্পনা আঁকার মত কৃত্রিম।
আবার অনেক সনেট দাঁড়িয়ে আছে একটু আলঙ্কারিক মারপ্যাঁচের উপর। কাব্যে অলংকার ভালো কিন্তু তার উপর পুরোপুরি নির্ভর করা অনেক ক্ষেত্রেই শোভন হয় না।
রামগতি ন্যায় রত এ গ্রন্থখানি সম্পর্কে লিখেছিলেন কবি যতকালে ইউরোপে গমন করিয়া ফরাসীদেশস্থ ভরসেলস নগরে অবস্থান করেন, তৎকালে এই কাব্য রচিত হয়। কবির স্বহস্ত লিখিত ইহার উপক্রমভাগ লিথোগ্রাফে মুদ্রিত হইয়াছে। তদদ্বারা তাঁহার হস্তলিপি দর্শনেচ্ছুগণ পরিতৃপ্ত হইবেন। মিত্রাক্ষর ও অমিত্রাক্ষর উভয়বিধ ছন্দের চতুর্দশ পঙ্ক্তিতে একশতটি পৃথক পৃথক বিষয় ইহাতে বর্ণিত হয়েছে।
চতুর্দশপদী কবিতাবলী প্রকাশিত হয় ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের ১ আগস্ট। একই কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবাসী আশ্বস্ত হলেন, এত দিনে মধু কবি সত্যিকার অর্থে বঙ্গভাষা এবং বঙ্গ দেশের মর্যাদা উপলদ্ধি করেছেন, যে ভাষা যে দেশের চেয়ে তার কাছে আরাধ্য ছিল ইউরোপ অথচ সেই ইউরোপে এসেই তার ভাল লাগলো স্বদেশ, স্বদেশের প্রকৃতি, স্বদেশের মানুষ। চতুর্দশপদী কবিতা কবিকে আরেক মাত্রায় উন্নিত করলো গৌড়জনের কাছে। তবে যে আর্তি ছিল, আকুতি ছিল দেশ মাতার কাছে-রেখো মা, দাসেরে মনে তা যেন সত্যিকার অর্থেই গৃহীত হলো ধন্য করলো বাংলার শ্রেষ্ঠ মহাকবি চতুর্দশপদীর লেখক কবি মধুসূদনকে।
#মধুসূদন দত্তের ইংরেজি সনেটঃ
কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ইংরেজি সনেট সংখ্যা ১৮ টি। এর মধ্যে তিনি "To a star during the Cloudy" শিরোনামে ৯ টি সনেট রচনা করেছেন।
এই ১৮ টি সনেটর মধ্যে খাঁটি পেত্রার্কীয় রীতিতে রচিত সনেট সংখ্যা মাত্র ২/৩ টি।
মাইকেলের লেখা ইংরেজি সনেটগুলির মিলবিন্যাস নিম্নরূপঃ
১) কখখক গঘগঘ ঙচঙচ ছছ
২) কখকখ গঘগঘ ঙচঙচ ছছ
৩) কখকখ গঘগঘ ঙচচ ঙঙচ
৪) কখকখ গঘঘগ ঙচঙ চঙচ
৫) কখখক কখখক গঘগ ঘগঘ
৬) কখখক কখকখ গঘগ ঘগঘ
৭) কখখক কখখক গকগ কগক
৮) কখখক কগকগ ঘঙঘ চঘচ
৯) কখখক গঘগঘ ঙচঙচ ছছ
১০) কখকখ গঘঘগ ঙচঙ ছছ
১১) কখকখ কগকগ ঘঙঘ ঘচচ
১২) কখকখ গঘগঘ ঙচঙ চছছ
১৩) কখকখ গঘগঘ ঙচচ ঙছছ
১৪) কখখক গঘগঘ ঙচছ ছচঙ
১৫) কখখক কখকখ গঘগ ঘঙঙ
১৬) কখকখ খককখ গঘঙ গঘঙ
১৭) কখকখ কখখক গঘঙ গঘঙ
#বাংলা সাহিত্যে মধুসূদন দত্তের সনেট এবং সনেটগুলির ধারাঃ-
মধুসূদনের বাংলা ভাষায় রচিত সনেট সংখ্যা ১০৮ টি।
এই ১০৮ টি সনেটর অন্তরঙ্গ ও বহিরঙ্গ রূপ বিশ্লেষণ করে তার সনেট ধারাকে ৭ টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ
১) খাঁটি পেত্রার্কীয় রীতিতে রচিত সনেট সংখ্যাঃ ২৪ টি
২) ভঙ্গ পেত্রার্কীয় রীতিতে রচিত সনেট সংখ্যাঃ ৩৯ টি
৩) শিথিল পেত্রার্কীয় রীতিতে রচিত সনেট সংখ্যাঃ ১টি
৪) মিলটনীয় রীতিতে রচিত সনেট সংখ্যাঃ ২ টি
৫) ভঙ্গ মিলটনীয় রীতিতে রচিত সনেট সংখ্যাঃ ৩৬ টি
৬) শিথিল মিলটনীয় রীতিতে রচিত সনেট সংখ্যাঃ ৩ টি
৭) ভঙ্গ শেক্সপিয়রীয় রীতিতে রচিত সনেট সংখ্যাঃ ৩ টি
#মাইকেলের ১০৮ টি সনেট/চতুর্দশপদী কবিতার মিল বিন্যাসঃ-
কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১০৮ টি সনেট /চতুর্দশপদী কবিতায় উনিশ প্রকার মিলবিন্যাস লক্ষ্য করা যায়। নিচে কবিতাসহ মিলবিন্যাস তুলে ধরা হলোঃ
• একঃ কখকখ কখকখ গঘগ ঘগঘ
এ পযার্য়ের সনেট সংখ্যা ২৯ টি। যথাঃ
চতুর্দশপদী কবিতাবলীঃ অন্নপূর্ণার ঝাঁপি, পরিচয়, কবি, কুসুমে কীট, সরস্বতী, কল্পনা, মধুকর, উপক্রম-১, উপক্রম-২, সীতার বনবাসে-২, বিজয়াদশমী, কোজাগর লক্ষীপূজা, বীররস, নদীনীরে প্রাচীন দ্বাদশ শিবমন্দির, কিরাত আর্জুনীয়ম, দেবদোল, গোগৃহ রণে, দুঃশাসন, দ্বেষ-২, ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্ত, ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, সতেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অর্থ, হরিপর্ব্বতে দ্রোপদীর মৃত্যু, আমরা, শকুন্তলা এবং ব্রজবভ্রান্ত।
বিবিধ কাব্যঃ পঞ্চকোট গিরি।
• দুইঃ কখকখ কখখক গঘগ ঘগঘ
এ পযার্য়ের সনেট সংখ্যা ১৩ টি। যথাঃ
চতুর্দশপদী কবিতাবলীঃ পরিচয়-২, সীতাবনবাসে-১, শৃঙ্গার রস-২, হিড়িম্বা-১, হিড়িম্বা-২, কপোতাক্ষ নদ, নূতন বৎসর, শনি, পৃথিবী, পন্ডিতবর থিওডোর এবং সমাপ্তে।
বিবিধ কাব্যঃ ঢাকাবাসীদিগের অভিনন্দনের উত্তরে এবং পরেশনাথ গিরি।
• তিনঃ কখখক খকখক গঘঘ গঘগ
এ পযার্য়ের সনেট সংখ্যা ১ টি। যথাঃ-
চতুর্দশপদী কবিতাবলীঃ যশের মন্দির।
• চারঃ কখখক খকখক গঘগ ঘগঘ
এ পযার্য়ের সনেট সংখ্যা ১৭ টি। যথাঃ
চতুর্দশপদী কবিতাবলীঃ সৃষ্টিকর্তা, সায়ংকাল, নন্দনকানন, বসন্তে একটি পাখির প্রতি, ভরসেলস নগরে রাজপুরী ও উদ্যান, পরলোক, গদাযুদ্ধ, রৌদ্র রস, উদ্যানে পুষ্করিনী, সাগরে তরি, যশঃ, ভাষা, শ্যামাপক্ষী, বাল্মিকী, মিত্রাক্ষর, আশা এবং ১০০ নং।
• পাঁচঃ কখখক কখখক গঘগ ঘগঘ
এ পযার্য়ের সনেট সংখ্যা ৭ টি। যথাঃ-
চতুর্দশপদী কবিতাবলীঃ সায়ংকালের তারা, মহাভারত, ঈশ্বর পাটনী, শ্মশান, সংস্কৃত, রামায়ণ এবং কোনো এক পুস্তকের ভূমিকা পড়িয়া।
• ছয়ঃ কখখক কখকখ গঘগ ঘগঘ
এ পযার্য়ের সনেট সংখ্যা ৭ টি। যথাঃ-
চতুর্দশপদী কবিতাবলীঃ প্রাণ, সীতাদেবী, সুভদ্রা হরণ সাংসারিক জ্ঞান, শ্রীমন্তের টোপর, কবিবর টেনিসন এবং কবিবর হুগো।
• সাতঃ কখকখ খককখ গঘগ ঘগঘ
এ পযার্য়ের সনেট সংখ্যা ৬ টি। যথাঃ-
চতুর্দশপদী কবিতাবলীঃ সূর্য, বঙ্গদেশে একমান্য বন্ধুর উপলক্ষে, শৃঙ্গার রস-১, উর্ব্বশী, কেউটিয়া সাপ এবং কুরুক্ষেত্র।
• আটঃ কখকখ খকখক গঘগ ঘগঘ
এ পযার্য়ের সনেট সংখ্যা ১৫ টি। যথাঃ-
চতুর্দশপদী কবিতাবলীঃ কালিদাস, বউ কথা কও, নিশা, কবিতা, নিশাকালে নদীতীরে বটবৃক্ষ তলে শিবমন্দির, ছায়াপথ, রাশিচক্র, সুভদ্রা, দ্বেষ-১, বটবৃক্ষ, তারা, কবিগুরু দান্তে, ভারতভূমি এবং ভূতকাল।
বিবিধ কাব্যঃ কবির ধর্মপুত্র।
• নয়ঃ কখখক খককখ গঘগ ঘগঘ
এ পযার্য়ের সনেট সংখ্যা ৩ টি। যথাঃ-
চতুর্দশপদী কবিতাবলীঃ করুণরস, শ্রী পঞ্চসী এবং আশ্বিন মাস।
• দশঃ কখকখ খকখক গঘঘগ ঙঙ
এ পযার্য়ের সনেট সংখ্যা ১ টি। যথাঃ-
চতুর্দশপদী কবিতাবলীঃ বঙ্গভাষা।
• এগারোঃ কখখক কখখক গঘঙ গঘঙ
এ পযার্য়ের সনেট সংখ্যা ১ টি। যথাঃ-
চতুর্দশপদী কবিতাবলীঃ কমলে কামিনী।
• বারোঃ কখখক খকখক গঘঘ গকক
এ পযার্য়ের সনেট সংখ্যা ১ টি। যথাঃ-
চতুর্দশপদী কবিতাবলীঃ জয়দেব।
• তেরোঃ কখকখ কখকখ গঘগ ঘঙঙ
এ পযার্য়ের সনেট সংখ্যা ১ টি। যথাঃ-
চতুর্দশপদী কবিতাবলীঃ কাশিরাম দাস।
• চৌদ্দঃ কখকখ কখখক গঘগ ঘঙঙ
এ পযার্য়ের সনেট সংখ্যা ১ টি। যথাঃ-
বিবিধ কাব্যঃ পুরুলিয়া।
• পনেরোঃ কখকখ কখকখ গঘঙ গঘঙ
এ পযার্য়ের সনেট সংখ্যা ১ টি। যথাঃ-
চতুর্দশপদী কবিতাবলীঃ কৃত্তিবাস।
• ষোলোঃ কখকখ খককখ গঘঘ গঘগ
এ পযার্য়ের সনেট সংখ্যা ১ টি। যথাঃ-
চতুর্দশপদী কবিতাবলীঃ মেঘদূত-১।
• সতেরোঃ কখখক কখকখ কগক গকক
এ পযার্য়ের সনেট সংখ্যা ১ টি। যথাঃ-
চতুর্দশপদী কবিতাবলীঃ মেঘদূত-২।
• আঠারোঃ কখকখ খকখক গখগ খগখ
এ পযার্য়ের সনেট সংখ্যা ১ টি। যথাঃ-
চতুর্দশপদী কবিতাবলীঃ পুরুরবী।
• উনিশঃ কখখক খকখক গখখ গখগ
এ পযার্য়ের সনেট সংখ্যা ১ টি। যথাঃ-
বিবিধ কাব্যঃ পঞ্চকেোটস্য রাজস্রী
★ উল্লেখিত ১০৮ টি সনেটর মিলবিন্যাস লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে মধুসূদন সনেটগুলির 'অষ্টকে' আট প্রকার মিল সৃষ্টি করেছেন। যথাঃ
১) কখকখ কখকখ : সনেট সংখ্যা ৩১ টি।
২) কখকখ খকখক : সনেট সংখ্যা ১৭ টি।
৩) কখখক কখখক : সনেট সংখ্যা ০৮ টি।
৪) কখখক খককখ : সনেট সংখ্যা ০৩ টি।
৫) কখকখ কখখক : সনেট সংখ্যা ১৪ টি।
৬) কখকখ খককখ : সনেট সংখ্যা ০৭ টি।
৭) কখখক খকখক : সনেট সংখ্যা ২০ টি।
৮) কখখক কখকখ : সনেট সংখ্যা ০৮ টি।
• ষটকে নয় প্রকার বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। যথাঃ
১) গঘগ ঘগঘ : সনেট সংখ্যা ৯৭ টি
২) গঘঘ গঘগ : সনেট সংখ্যা ০২ টি
৩) গঘগ ঘঙঙ : সনেট সংখ্যা ০২ টি
৪) গঘঘ গঙঙ : সনেট সংখ্যা ০১ টি
৫) গঘঙ গঘঙ : সনেট সংখ্যা ০২ টি
৬) গঘঘ গকক : সনেট সংখ্যা ০১ টি
৭) গখখ গখগ : সনেট সংখ্যা ০১ টি
৮) গখগ খগখ : সনেট সংখ্যা ০১ টি
৯) কগক গকক : সনেট সংখ্যা ০১ টি
#কবি মধুসূদন দত্তের দুইটি সনেট/চতুর্দশপদী কবিতা বিশ্লেষণঃ-
★ ১.
চতুর্দশপদী কবিতা ‘বঙ্গভাষা’-র শুরুতে লেখকের মানসিক বেদনাবোধ আর আত্ম-উপলব্ধির বিবরণ সাজানো হয়েছে এভাবেঃ
হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব ∣ বিবিধ রতন;- (৮+৬) ক
তা সবে, (অবোধ আমি!) ∣ অবহেলা করি, (৮+৬) খ
পর-ধন-লোভে মত্ত, ∣ করিনু ভ্রমণ (৮+৬) ক
পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি ∣ কুক্ষণে আচরি। (৮+৬) খ
কাটাইনু বহু দিন ∣ সুখ পরিহরি। (৮+৬)) খ
অনিদ্রায়, অনাহারে ∣ সঁপি কায়, মনঃ, (৮+৬) ক
মজিনু বিফল তপে ∣ অবরেণ্যে বরি;- (৮+৬) খ
কেলিনু শৈবালে, ভুলি ∣ কমল-কানন। (৮+৬) ক
{অষ্টক}
স্বপ্নে তব কুললক্ষ্মী ∣ কয়ে দিলা পরে,- (৮+৬) গ
ওরে বাছা, মাতৃকোষে ∣ রতনের রাজি (৮+৬) ঘ
এ ভিখারী-দশা তবে ∣ কেন তোর আজি? (৮+৬) ঘ
যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, ∣ যা রে ফিরি ঘরে। (৮+৬) গ
পালিলাম আজ্ঞা সুখে; ∣ পাইলাম কালে (৮+৬) ঙ
মাতৃভাষা-রূপ খনি, ∣ পূর্ণ মণিজালে। (৮+৬) ঙ
{ষটক}
[বঙ্গভাষা/মাইকেল মধুসূদন দত্ত]
[এখানে অন্ত্যমিলঃ (কখকখ : খকখক :: গঘঘগ : ঙঙ)]
•'বঙ্গভাষা’ কবিতার অন্ত্যমিল(কখকখ খকখক গঘঘগ ঙঙ) লক্ষ্য করলে দেখা যায় এখানে অষ্টকের প্রথম চতুষ্ক (প্রথম ৪ পংক্তি)-কখকখ- শেক্সপীয়রীয় রীতিতে রচিত।
অষ্টকের দ্বিতীয় চতুষ্ক (শেষ ৪ পঙক্তি)-খকখক- অনিয়মিত শেক্সপীয়রীয় রীতিতে রচিত।
ষটকের প্রথম চতু্ষ্ক (প্রথম ৪ পঙক্তি)-গঘঘগ- পেত্রার্কীয় রীতিতে রচিত।
ষটকের শেষ দ্বিপদী (শেষ ২ পঙক্তি)-ঙঙ- আবার শেক্সপীয়রীয় রীতিতে রচিত।
★ ২.
কি দুখে, হে পাখি, তুমি | শাখার উপরে ক
বসি, বউ কথা কও, | কও এ কাননে?— খ
মানিনী ভামিনী কি হে, | ভামের গুমরে, ক
পাখা-রূপ ঘোমটায় | ঢেকেছে বদনে? খ
তেঁই সাধ তারে তুমি | মিনতি-বচনে? খ
তেঁই হে এ কথাগুলি | কহিছ কাতরে? ক
বড়ই কৌতুক, পাখি, | জনমে এ মনে— খ
নর-নারী-রঙ্গ কি হে | বিহঙ্গিনী করে? ক
{অষ্টক; পর্ব বিন্যাসঃ ৮+৬}
সত্য যদি, তবে শুন, | দিতেছি যুকতি; গ
(শিখাইব শিখেছি যা | ঠেকি এ কু-দায়ে) ঘ
পবনের বেগে যাও | যথায় যুবতী; গ
“ক্ষম, প্রিয়ে” এই বলি | পড় গিয়া পায়ে!— ঘ
কভু দাস, কভু প্রভু, | শুন, ক্ষুন্ন-মতি, গ
প্রেম-রাজ্যে রাজাসন | থাকে এ উপায়ে। ঘ
{ষটক; পর্ব বিন্যাসঃ ৮+৬}
[বউ কথা কও/মাইকেল মধুসূদন দত্ত]
[এখানে অন্ত্যমিলঃ কখখক,খককখ- গঘগঘগঘ]
•'বউ কথা কও' কবিতার অন্ত্যমিল(কখকখ খকখক গঘঘগগঘ) লক্ষ্য করলে দেখা যায় এখানে অষ্টকের প্রথম চতুষ্ক (প্রথম ৪ পংক্তি)-কখকখ- শেক্সপীয়রীয় রীতিতে রচিত।
অষ্টকের দ্বিতীয় চতুষ্ক (শেষ ৪ পঙক্তি)-খকখক- অনিয়মিত শেক্সপীয়রীয় রীতিতে রচিত।
ষটকের পঙক্তিগুলোতে (৬ পঙক্তি)-গঘগঘগঘ- অনিয়মিত পেত্রার্কীয় রীতি লক্ষ্য করা যায়।
-------★★★-------
→চলবে...