চাল থেকে গড়িয়ে পড়া লতাপাতায়
ফোঁটা ফোঁটা শিশির বিন্দু
সূর্যহীন কুয়াশাচ্ছন্ন কৃপণ আলোকে
হীরক দ্যুতির মত কাছে টানে,
শুয়ে বিছানাতে দেখি অপলক দৃষ্টিতে
গাঢ় কুয়াশার মাঘের প্রাক্কালে
বাংলার কোন এক নামহীন গাঁওয়ে।
রসের গন্ধে সচকিত , হ্যা রসেরই বটে
উঠোনে তাফলে ফোটে গনগনে আঁচে
ঘন হয়ে আসা জিরান রসের ঘ্রান
আমি খুজে পাই বাংলার অকথিত রুপবান।
উচু গাছগুলো কুয়াশারে জড়িয়ে রয় প্রানপনে
নিষ্ঠুর সূর্য কুয়াশা গলিয়ে একদা
হাসবে তামাশার হাসি খিক খিক করে।
খেয়া পার হয় অস্পষ্ট কিছু মানুষেরা
কেউ কেউ দাড়িয়ে নদীপারে ফোকে বিড়ি
গম্ভীর ডাক কাকেদের , ডাহুক, শালিখ
আর চড়ুইয়ের মাতম নেই পোকা
নেই পোকা , নির্মম মাঘ দিয়েছে ঠেসে
গাছের কোটরে নির্ভয় নিরাপদ আশ্রয়ে
হাসের দল হেলেদুলে পুকুরে নামে গুগলি শিকারে।
সর্ষের তেলে পিঠমর্দন দাদীর হাতে বাঁশির মূর্ছনার মত
পানা ঘেরা কাজল কালো পুকুরে দাপাদাপি দলেবলে
নতুন গামছার সোঁদা ঘ্রানে জুড়ায় প্রানমন
বাঁশবাগানে ডাহুক ডাকে একাধারে।
শোল মাছের ঝোল আর কচি লাউয়ের ছালুন
আহা! এমন কি যায় পাওয়া জার্মান বা চীনে !
যে ধান বাকি ছিল তা কেটে নিয়ে চাষী
ফিরছে ঘরে মাথায় চড়িয়ে দুলে দুলে
ফিঙ্গে পাখি ধরে পোকা ধান ক্ষেতের নাড়ায়
সন্ধ্যায় গায়ে চাদর দিয়ে টেনে
রসিয়ে খাই রসে ভেজানো তুলতুলে চিতই
মুড়ি, খই , চিড়া আর তিলের নাড়ু
পাশেই বাজে শাঁখ উলুধ্বনি ধুপের গন্ধ
সন্ধ্যা নেমেছে ধরায় চেরাগ হারিকেন ঘরেঘরে
কুড়ানো পাতায় জালিয়ে আগুন সারিগান চলে
আহ কি আরাম ঘন হয়ে বসে তাপ হরনের ছলে ।
রাতে হাঁস সাথে সেমাই পিঠে চুই ঝালে কি যে স্বাদ !
লেগে থাকে মুখে বছর ধরে ওই প্রবাসে ।
মাঘের অমাবশ্যা উঠোনে বেঞ্চে চিত হয়ে
দেখি তারকার রাজ্য নক্ষত্র আর গ্রহের সমাহারে
ওষে ভিজে যায় মুখমণ্ডল মুছি বারেবারে
গাছ থেকে কাচা রস চুরি করে দেই মেরে গেলাশ ভরে
চারিদিকে সুনসান শিশিরের পতন যাই বিছানাতে
কার্পাস তুলোর লেপে দিনমান সূর্যের ওম তখনো লেগে
ভালবাসার শীত গায় ধানভানার গীত তন্দ্রাচ্ছন্ন ঘোরে ।।