সেদিন প্রভাতে সোফাতে বসিয়া পড়িতেছি নজরুল,
হঠাৎ দোরে কড়াঘাত শুণে বাধিঁল গন্ডগোল।
প্রভাত বেলা ছন্দে কে মোর ঘটাইল ব্যাঘাত,
মেজাজখানা পঞ্চমে মোর উঠিল তৎক্ষণাত।
কদিন যাবৎ বেড়েছে বেজায় উৎপাত ভিখারীর
আজি এ সকালে আসিয়া আবার হইয়াছে হাজির!

উঠিলাম রেগে বেটা ভিক্ষুক সমাজের জঞ্জাল,
নাজানি আছেরে কপালে তোর আজ কতশত গালাগাল।
তড়িৎ গিয়ে খুলিলাম মোর ঘরের দড়জা খানা,
দেখি সম্মূখে মোর আছে দাড়াঁয়ে মূখ এক অচেনা।
পরিপাটি তার বেশভূষা ছিল, চুলেতে তেরির ভাঁজ,
মাঝবয়সি মলিন মূখে পূর্ণ ছিল লাজ।

কহিল- ভেঁজা নয়নে চাহিয়া আমার পাণে,
ভিক্ষাবৃত্তি করি নাই আমি কোনকালে কোনখানে।
শিক্ষক আমি কারীগড় গড়ার এ সমাজ,
বড়ই দূখে দাড়ায়ে বাছা তোমার দুয়ারে আজ।
সন্তানে মোর পাইয়াছে হায় কঠিন ব্যধিতে,
ডাক্তরি সনদ লইয়া তাই আজ ঘুরি দড়জাতে দড়জাতে

সত্তর হাজার লাগিবে টাকা করিতে চিকিৎসা,
ভিখারী বেশে দ্বারেতে তোমার কিছু দাও মোরে পয়শা।
প্রাইমারী স্কুল শিক্ষক আমি করিতে পারিনি আয়,
যত টাকা আজ প্রয়োজন মোর বাঁচাইতে বাছায়।
দ্বারে দ্বারে ঘুরি, টাকা চাহি ফিরি, খেয়ে লজ্জার মাথা,
বুঝাবো বাছা কেমন করিয়া বুকেতে কত যে ব্যাথা।

কহিয়া রহিল দাড়াঁয়ে ঠায় নতজানু শিড়েতে,
রাগ মোর মাটি হইয়া গেলো বিষম ব্যাথাতে।
পকেট কাঁচিয়া চারটি টাকা তাঁর দিলাম হাতেতে,
চোখ মুছে সেই সোনার মানুষ ফেরে অন্য দ্বারেতে।

দোরখানা এঁটে, নজরুল ফেলে ভাবিলাম বসে ঘরে,
উচ্চাসনের সোনার প্রতীম লুটালো ধুলার পরে।
টাকার উপর শুয়ে আছে আজ কত কুলাঙ্গার,
মানবশ্রেষ্ঠ শিক্ষক আজ ঘুরছে দ্বারে দ্বার।

ধিক্কার এই সমাজভেদে, আর নিজেকেই ধিক্কার !!

    ধিক্কার
        -শাহাদাৎ শুক্ল
        (রচনাকাল- ১৮/০৭/২০০১)