এই শহরে আমার কোনো বন্ধু নেই!
এই শহরে আমার কোনো বন্ধু নেই। একদিন এই অচেনা শহরে নতুন পা রেখেছিলাম। ছায়াঘেরা, পাখিডাকা, সবুজ-শ্যামল গ্রাম থেকে একাকী এসেছিলাম— ইট-কাঠ-পাথরের এই যান্ত্রিক শহরে।
তারপর বন্ধু হলো, স্বজন হলো, হলো অনেক আপনজন। এরপর বয়স বাড়তে থাকলো, পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকলো চাহিদা। আমি চাহিদার কাছে নতজানু হয়ে গেলাম।
পড়াশোনা শেষ করে চাকরি শুরু করলাম এ চেনা শহরে। তারপর অবাক বিস্ময়ে দেখলাম আমার বন্ধু-বান্ধব-স্বজন সব কমতে শুরু করেছে। তাদেরও বয়স বেড়েছে, ব্যাস্ততা বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে চাহিদা বেড়েছে হয়তো। তারাও রুটি-রুজির বন্দোবস্ত করতে ছুটে চলছে ক্ষুধার্ত বাঘের মতো।
আগে যখন ছাত্র ছিলাম, কী নির্মল বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু চাকরিজীবনে দেখছি এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা। আমাদের মাঝে যেন সহকর্মীসুলভ সম্পর্ক নেই; যে সম্পর্ক আছে সেটা প্রতিদ্বন্দ্বীমূলক সম্পর্ক। এই শহরে যেখানেই তাকাই শুধু আমার প্রতিদ্বন্দ্বী দেখি; কোনো বন্ধু দেখি না।
বহুবার বিপদে পড়েছি। ক্যাঙারু তার শাবক নিয়ে যেমন করে বিপদ পেরোই আমি ঠিক তেমনি করে বিপদ পেরিয়েছি। কোনো বান্ধব আমার বিপদে এগিয়ে আসেনি।
এই শহরে প্রচুর মানুষ; কিন্তু আমি বড্ড একা! শহরের এই বাতাস, গাড়ির সাইরেন, আকাশচুম্বী অট্টালিকা, রাস্তার ঝাড়বাতি, রাস্তার মোড়ের নিয়নবাতি আমাকে টানে না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। সবকিছু ছেড়ে আমার পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে।
সত্যি বলছি— এই শহরে আমার কোনো বন্ধু নেই।
২০.০২.২০২৪ খ্রি.
কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ।