কবিতায় কবি ফুটিয়ে তুলে সমকালীন সমাজচিত্রের রূপ। মানুষকে কখনো অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় আবার কখনো ভবিষ্যতের পথ দেখায় কবিতা। শুধু মাত্র ভাষা জ্ঞান দিয়ে কবিতা লেখা যায়না তার জন্য দরকার আধ্যাত্নিকতা আর কবিতা বুঝার জন্যও দরকার ভাষা জ্ঞানের সাথে সাথে গভীর উপলদ্ধি। কবিতা মানুষকে কাঁদায়, হাসায় আবার প্রতিবাদী করে তোলে। কবিতা সকল অসুন্দরের বিরুদ্ধে কথা বলে, সকল মিথ্যার প্রাচীর ডিঙিয়ে রচনা করে সুন্দর আগামী। কিন্তু আজকাল অনেক কবিরাই তাদের কবিতায় শুধু নারীকে উপজীব্য করে নিয়েছে। নারী সৃষ্টিকর্তার এক অনন্য সৃষ্টি।পৃথিবীতে এমন কোন কবি হয়তো পাওয়া যাবেনা যারা নারীকে নিয়ে কবিতা লিখেনি বা তাদের কবিতার অনুসঙ্গ হয়ে নারী আসেনি। তাই বলে নারীর অঙ্গ প্রতঙ্গের বর্ননায় কবিতা ভরপুর থাকতে হবে এমনতো হওয়া উচিত নয়। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জসীম উদ্দীন, জীবনানন্দ সহ প্রায়ই সকল কবিই নারীকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন কিন্তু কখনো অশ্লীলতা আসেনি বা শালীনতার দেয়াল টপকিয়ে যায়নি কবিতায়। বর্তমান সময়ের অনেক কবিরা যেমন নারীর অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে প্রধান উপজীব্য করে কবিতা লিখছে তেমনি করে এসব কবিতা পড়ার বেশ কিছু পাঠকও সৃষ্টি হয়েছে যারা কবিতায় জৈবিক চাহিদা খুঁজে। অপরিণত বয়সের আসক্তি খুঁজে কবিতার ছন্দে। নারীর শরীরবৃত্তীয় বর্ণনার নিখাদ ছবি চায় কবিতার লাইনে। যৌবনের যে বৈপ্লবিক রূপ আছে তা এড়িয়ে যায়, তারা যৌবন বন্দনা শুনতে চায়না, তারা চায় যৌনতার বর্ননা। তাই অনেকই এখন কবিতায় ফুটিয়ে তুলে নারী দেহের বর্ননা যা শালীনতার মধ্যে পড়েনা। বুকের পাজরে কে কাকে বেঁধেছে, কার অধরে কে আঁকিলো উষ্ণ চুম্বন, কার বিশেষ অঙ্গ কত ঐশ্বর্য বিলায় এসব কথা থাকে তাদের কবিতায়। নারীর সৌন্দর্য কি শুধু যৌনতায়? কবিতার উপজীব্য কি শুধু নারী দেহের প্রতি জৈবিক আসক্তি? নারীর সাথে একজন পুরুষের প্রথম পরিচয় আর সম্পর্ক হলো ’মা’ আর ‘সন্তানের’। অথচ আমরা কোন কিছু না ভেবে সস্তা পাঠক প্রিয়তা পাবার লক্ষ্যে কবিতাকে করে তুলছি অশ্লীলতার অনুসঙ্গ। আমাদের অগ্রজ কবিরা যারা কবিতায় অশ্লীলতাকে উপজীব্য করেননি তাদের কবিতার আবেদন কি হারিয়ে গেছে? রবীন্দ্রনাথ, নজরুল কিংবা তাদের উত্তরসূরীরা কি পাঠকের কাছে উপেক্ষিত? কখনো নয় বরং তাদের কবিতার আবেদন পৃথিবীর প্রলয় দিন পর্যন্ত মানুষের অন্তরকে বিকশিত করবে, সত্য আর সুন্দরের জয়গান গেয়ে যাবে। আর যারা বর্তমানে শালীনতা বিবর্জিত কবিতা লিখে সস্তা পাঠক প্রিয়তা অর্জনের চেষ্টা করছে তাদের কবিতা একদিন পাঠক হৃদয় থেকে মুছে যাবে সময়ের হাত ধরে। আমার সাথে অনেকে একমত না ও হতে পারেন তাতে আমি সামান্যতমও ব্যথিত হবোনা কেননা এটি একান্তই আমার উপলব্দির কথা তবে আপনাদের সুন্দর আলোচনা আশা করছি। জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা হেতু শব্দ চয়ণ বা বাক্য বিন্যাসে যদি কারো অন্তরে অনৈচ্ছিক দুঃখ দিয়ে থাকি তাহলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি কামনা করছি।
আলোচনাটি ১৫৩৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের সময়: ১৬/০২/২০১৬, ০৭:০৮ মি: