মেঠো তেলের পিদ্দিম জ্বলে, হলুদ আলোয় সাঁঝের বেলা,
কাঁঠাল কাঠের পিঁড়িতে বসে - ‘মতির-মা’য়ের পুরাণ-কথা;
হয়তোবা নির্মেঘ রোদে – ‘উলি-মামুদ’য়ের সুপারি গাছের ডগায়
ঝোলানো ঠ্যাং’র গেছো বিড়াল ভূত-কথা;
নয়তোবা, ‘ফকির’য়ের কাস্তে –
সবুজ ঘাসের বুক চিরে বলা – নূতন কচি ঘাস-কথা;
হয়তো! ‘প্রহল্লাদ’য়ের মাটি-গন্ধে কাদামলা দু’টি পা -
কাদা গিয়াছে শুকায়ে, তবুও না বুঝে বলা - সব বোঝা-কথা;
আমার সেই ছেলেবেলা,
ছোটবেলার কতো অ-দেখা কথা।
লাল শিমুলের ফুল ছুঁয়ে, নরম গোধূলির রাঙা আলোর বান,
ঘরের দাওয়ায় খুঁজে নেয় কোনো বোধ নীলিমার আহ্বান।
নক্ষত্রের থমথমে বাতি নেভা আলোয়, হিজল বনের ফাঁকে
আধখানি চাঁদ, মায়ের বুকের উষ্ণ ছোঁয়ায়, শুনিয়াছি সেই মা-কথা –
“আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে হবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?”
আমার সেই ছেলেবেলা,
ছোটবেলার কতো না-বলা কথা।
অশ্বত্থের ছায়ায় লিখে আসা, রাখাল ঘ্রাণে,
ধূসর পালকের হিজিবিজি সেই পাণ্ডুলিপি -
“এলো বৃষ্টি বুঝি এলো
গেল গেল আমসকত্তো
পোড়ারমুখো বৃষ্টি সব খেলো!”
ক্লান্ত! অবসন্ন! সেই পাণ্ডুলিপির সাথে – আর কথা হয় না আমার!
সোনালী ধানের শিরে, বসে আছি, অন্ধকারে মুখোমুখি, নীড় চোখে,
কখনো কি দেখা হবে? – ‘দারুচিনি দ্বীপের ভিতর’ অথবা নক্ষত্রলোকে
সোনালী রোদে উড়ে উড়ে, অথবা কোনো গাঙ-শালিখের হলুদ বুকে?