পূব আকাশে সূয্যি উঠিয়া আলো দিয়াছে উকি
কাকভোরে সবাই নিদ্রামগ্ন মোরা উঠিয়া চলি।
বাড়িটা বেহায় কিনারা ঘেঁষে আছড়ে পড়িত সোদা সোদা বালি
বর্ষা ঋতু কাল ডাকিয়া ভাঙিয়া পড়িত চাঙ্গর চাঙ্গর কূলই।
নদীর তটে নোঙর করিয়া জেলেরা ফেলিত মাচা
মাছ উপচে পড়েনা যেন ডেগ হাড়ি ফাঁকা।
তটের তরে একা দম্পতি বর্ষা শীত রোদে
কূল ভাসিয়া বেরিয়ে পড়িত দু'পাড় ভেলা সাজে।
ওরে শঙ্কু!ওরে শঙ্কু! একটুখানি দাড়াও
আকাশ কালো কালবৈশাখী, কোথায় চলিয়া যাও।
বেলা বলিল, সাজিয়া লয়ে একটু হবে দেরি
দিল ধমক ধ্যাত্তেরি; মোরা যাত্রাপালায় যাব নাকি।
তোর সোহাগে পিরীতি মধুর বৈঠা সাজিয়া
তোর ঘুঙুর পায়ে চড়িয়া শঙ্কু মজিয়া।
দেখিতেছি চলছে ছট পূজার তটে সমাগম
চারিপাশি হয়ে যেন ডাকিয়া করছে মোদের আমন্ত্রণ।
অদূরে আসছে তরী দুলিয়া ভর্তি মাছের গোছা
বেলা গিয়াছে ডেগচি আনিতে শঙ্কু তটে ঠাসা।
ওপারে রয়েছে পদ্ম মোরা নদীর মোহনায়
মাছোয়ারা এটে বসিয়া তটে সাজাচ্ছে জালের পর জাল।
তটের পাড়ে কলসি কাঁখে যাচ্ছে রমণীরা
শঙ্কু বেজায় তৃষ্ণায় মরি দুই ঢোক পিয়া।
ছোকরারা খেলছে ঘুড়ি উড়াই সূতো সূতোয় কাটি
একটা পড়িল তটের পাড়ে বেলা লুকিয়া রাখি।
এসেছে সেজে শিব-পার্বতী তটের কোলে ভিড়ে
দিয়েছে সবাই সাধ্যমত আমরা বাকি কীসে।
মিলেছি মাঝিরা সমাগমে তটের সেই পাড়ে
মোদের বাড়ি চিনিয়া দিল শঙ্কু বেলার কাছেরে।
খুঁজেছি সবাই শালপাতিয়া শালবনেরি ছটায়
একে বসে বসিয়া মাতিব সেই দিনটায়।
তটের পাড়ে এসেছে কচি ভাসিয়া ভাসিয়া
আহা! এ কী সর্বনাশ,
অপর তটে এক অভাগী দিল গঙ্গাসাগরে সন্তান তরিয়া।
লাজুক ছানা চেয়ে দিল মোর দুচোখে হাঁসি
চাপটি করে কোলে নিলাম তুহি মোর সম্বলই
বাড়ির তট স্বাক্ষী রহিল এ বিরল নিদর্শন
এটি নয় চমক,
এটি খোদার প্রেরিত দূত মোদের অভাগার জীবনে।
সব শেষে চলিল সবাই যে যার মত জীবন
শঙ্কু বেলার তট জ্বালিয়া দিল মোরাই সেই,
রহিল মোদের জীবন।