তোর পরানে গাহি
ওরে মোর বিনোদিনী তুই কোথায় চলে গেলি
তাম্বুল মাখা সেই হাঁসি
রূপের ললাটে কেবলি গাথি
তুই কোথায় চলে গেলি।
কোথায় কী ছিল মোর খামতি
তোর পরানে জুড়ে কেন এত অশান্তি।
আঙুলটা তো উঠেছে আমারি দিকে
তোর রাগের আগুন নেভেনি কিসে।
দাড়িয়ে আমি সেইখানে
তোর চলা যে শুরু যেখানে
আকাশটা হয়েছে গাঢ় কালো
দিশাহীন পথে নেই যে আলো।
জগত জুড়ায়ে এখন শুধু তুই
   চঞ্চল নয়নে কেঁদেছে ভূমি
মোর স্বভাবে তুই একা রই।
তোর আমি কখনো যে হতে পারিনি
শুধু এখন চুপিসারে বসে বসে ভাবি
ওরে মোর বিনোদিনী তুই কোথায় চলে গেলি।

জ্বালিয়েছিলি তুই সন্ধ্যাপ্রদীপ
তোর দীপের আলো নিভিয়েছিল হতাশা
তুই যেন সরলতার প্রতীক।
সেখানে ছিল ধূপ ধুনো
বুনো হৃদয়ে মেতেছে অশেষ গুনো।
দাঁড়িয়েছিলি তুই একা নব কনে
লজ্জাপাতা যেন ফিরে ফিরে তাকায়
ঘরে আলেয়া তোর দুপা চরণে।
ভরা পূর্ণিমায় চারিদিক আলো
দুপাড় জড়িয়ে নিভছে আঁধার;
তোর নেত্র ভরিয়ে শুধু কালো।
ভূলে গেছি সব স্মৃতি
ছবি হয়ে হৃদয়ে বিদ্ধ বিকৃতি।
দিয়েছি চিঠি সবুজ খামে
আসেনি উত্তর সেইটা সেইখানে।
লাগছে বিবর্ণ উৎসবের ঝিলিকে
আসিসনি তুই দিকবিদিক লাগছে ফিকে।
বুঝেছি এখন সব নীরব সাথী
ওরে মোর বিনোদিনী তুই কোথায় চলে গেলি।

সেখানে উড়ছে নীল ময়ূরী
তোর পদস্খলন যেন নাচন হরিণী
ঘিরে রয়েছে ফুলের সাজি
বাধতিস খোপায় নীরব সঙ্গিনী।
শ্রাবণ বিহারে বটের চড়ায়ে
ঝুলতিস দুপায় দোলায়ে দোলায়ে।
খেলতিস তুই খো খো যায়ে
পারতিস না তুই দস্যু খেলায়ে।
ধরে ফেলতিস ডগায় প্রজাপতি
আলতো ছোঁয়ায় সুখের আসন পাততি।
দিতিস তুই উলুধ্বনি
তোর শঙ্খ এ সন্ধ্যা হত অম্লানী।
এখন সকাল সন্ধ্যা লাগছে রূঢ়
তোর অন্যথা লাগে শুধু ক্ষীণ।
তোর কাছে একটি প্রশ্ন
জীবন দুয়ার হইতে চলি গেলি কেন?
অনেক অপেক্ষা এখন আসবি না যে তুই
ওরে মোর বিনোদিনী তুই কোথায় চলে গেলি।

চলতিস দুই জুড়িয়া জুড়িয়া
কলসী কোমরে শিউলি তলা মারিয়া।
শালিক ময়না বসত গুছায়ে
দিতিস তুই ধান ছড়ায়ে।
কাধতিস যাবি চড়ক মেলায়
পুতুলের বিয়ে নাগরদোলায়।
পারতিনা পড়তে আঁচল শাড়ি
লাজুক ঘোমটায় রুপোর নাকছাবি।
হঠাৎ যে তুই গেলি চলে
বাপের বাড়ি আসবি না কোনো কালে।
কেন করলি যে অভিমান
যাবার বেলা দিলি বলে,
সব শেষে তুই দিলি যেই;
ক্ষণিকের অতিথি রুগ্ন হাঁসি সেই
আসবি না! তুই কী আর আসবিনা?
ওরে মোর বিনোদিনী তুই কোথায় চলে গেলি।