হিমালয়ের উদর জাত
শিবের জটা হত
সেই প্রাচীনকালের ইতিহাসে রয়েছ তুমি
সমগ্র উত্তর থেকে টানা পূর্বে রয়েছে তার বিস্তৃতি
ভারতভূমি তাঁর অমর সন্তান
যুগ যুগ ধরে যার অতৃপ্ত নাম
সে আর অন্য কেউ নয়
মোদের গঙ্গা নদী
তোমার গর্ভ সিঞ্চন করে-
উদয় হয়েছে একঝাক শাখানদী।
হরিদ্বার, বারাণসী কিংবা পাটলিপুত্র
তোমার হাত ধরে পরে রয়েছে
প্রাচীন ভারতের গৌরবের ইতিহাস।
তুমি কখনো হয়েছ যমুনার সাথী
আবার কখনও দিয়েছ অলকানন্দার খরস্রোত।
তোমার দুকূলের বুক সিঁচিয়ে
হয়ে রয়েছে বিশাল হরিৎ ক্ষেত্র।
শ্রাবণের ধারায় তুমি হও ভরপুর।
তোমার জল যেন অমৃতের দান
যা পেয়েছে এই অধরা ভারতবাসী।
বর্ষাঘেরা তোমার দুকূল হয়ে যায় বন্যাকবলিত।
ছোট ছোট নৌকা থেকে বড়ো স্টিমার
সকলকে জায়গা করে দিয়েছ তুমি।
তোমার বুকে ধরা বেঁধে হয়েছে বড় বড় বাধ
হয়েছে জলবিদ্যুৎ ক্ষেত্র।
তুমি কোথাও হয়েছ সতেজ জলময়
আবার কোথাও চওড়া বালির স্তূপ।
এখন তোমার বালিকে সরাতে লাগে বেজায় দ্বন্দ্ব
তোমার বুক এটে রয়েছে বালির আবছায়ার প্রশ্ন।
তুমি কখন গিয়ে মিশেছ বিশাল বঙ্গ হয়ে
আবার কোথাও দিয়েছে ঝর্না
পর্যটকদের আকর্ষণ চেয়ে।
তোমাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য তীর্থক্ষেত্র
তোমার জলে অর্পন করে-
মানুষ নিজেকে করে পাপমুক্ত।
শুশুক, স্তন্যপায়ী কত প্রানীরা করছে তোমার বুকে খেলা।
জনসভ্যতার শিকারের চাপে তারা পাচ্ছে এখন অস্তিত্বের ঠেলা।
তুমি কোথাও পাও ঘাটের পাশে শিশুদের খেলা
আবার কোথাও স্রোতহীন জলের নিঃসাড়া
লক্ষ লক্ষ দর্শকদের ভীড়ে হয় কুম্ভমেলা।
তুমি কখন হয়ে মিশেছ ওপারে পদ্মা ও মেঘনা হয়ে
দুই বঙ্গের জগতকে করেছ বিশাল সেতুর বন্ধন করে।
তুমি নও শুধু ভারতবর্ষে
বিদেশেও যে তোমার ডাকনাম।
তোমার অতল সাগরে মিশে যাত্রীরা পায়
নতুন স্বর্গদ্যান।
তুমি কখনও গভীর জলের স্রোত
আবার কোথাও বক্ষে জমায়িত পলি
সভ্যতার হাত ধরে
তোমার উপর হয়েছে অনেক অত্যাচার।
পলিথিনের ব্যাগ, ছোট বড় আবর্জনা-
জমা হয়েছে তোমার উপর
ইতিহাসের পাতায় হাত ধরে
তুমি অনেকটা হারিয়েছ তোমার গৌরব।
পূর্ণিমার চাঁদের আলো মৃতপ্রায়
গঙ্গার বক্ষের জমা চাদরে।
কোথাও জমা হয় জঞ্জালের স্তূপ
তোমার গহন বয়ে।
বসন্তের পাতাঝরার মত লাগে তোমার রূপ
কোথায় যেন ছিল এককালে
জনবসতির কালের চাপে এখন অদৃশ্য তোমার লীলা
যার অবুঝ সময় মেপে।
জাগবে ভারত, জাগব মোরা, জাগবে ভারতবাসী,
স্বদেশের মুখ যখন হয়ে যাবে অতল বোঝা
তখন বুঝবে তোমার কদরটি।