তোমরা নিতাই আমরা বলাই চন্দ্রবালাই কে ?
তুমি চারু লতায় তরু ছিচকাদুনি মেয়ে।
বকুল গাঁথা ফুল আঁকা তোমার নাকছাবি
সাড়ি গায়ে আলতা পায়ে ঝঞ্জার পা দুটি।
তোমারে ডাকি, আহারে চারু!
    দুদণ্ড দাড়াতো দেখি,
তুমি তো সেই অস্থির নাগরী
পাটিসাপটা, ক্ষীরকদম,
        একটু ফাঁকে তেমনি।
তুমি সেই মাদল,
  টিয়া-ময়নার সরলা কন্ঠে উত্তলিত হও
তোমার গলায় ধ্বনিত হয়,
                         পল্লিমঙ্গলের চিমনি।
আমার হাতটি তোমার দুটি মিলল কবে কখন
দক্ষ যজ্ঞ বেঁধে যাবে সোনার গড়ন তন।
তোমার ঠোটে মিষ্টি হাঁসি গায় প্রকাশি
ভোলা ময়রা প্রহর প্রহর উড়ায় শুধু মাছি।
ঠাট্টা করো মজা করো শুধুই দুইবেলা
তোমার চুলে বেণী বাঁধা লাল সূতোয় খোলা।
ছুটি পেল দৌড়ে গেল লিচুতলায় কে ?
পাতায় পাতায় থোকায় থোকায় আটবে বিচি যে।

ওগো চারু!
তুমি চারু,
     ভগ্ন সরু,
          নাচো দুরু দুরু;
   সোনায় স্বপন কে দোহারা,
তুমি যে নও কারো,
শুধু আমারো-
পা দুটি বাঁকানো চোকানো শুধু থুরথুরু।
তুমি চতুর বেজায় অদ্ভুত,
   দেও হুটহাট ফাঁকি
পালাতে গিয়ে দাও কেঁদে মাস্টার সাহেবের বকুনি।
  তুমি দেও কানে কুন্ডল
       বাজে টুনটুনি
হীরক রাজার অজানা পাতায়
     ঘুমিয়ে পড় দুখানি।
তুমি চারু বাতাসে আসো বাতাসে করো চটং চাটন।
হেলে দুলে সরু গায়ে বেলা পড়ল কখন।
তোমার চাওয়া,
       লতায় চড়া,
             নামি চারুলতা;
বসবে না মন জোড়ায় জোড়ায়
তুমি ছাড়া আমি যে কেবলি একা।

ওহে চারু,
তুমি একটু বসত দেখিনি,
তোমার দরবারে বসাবো মাথা-
    প্রলাপ-প্রহসন দুই দণ্ডি।
তোমার আঁখি দুটি প্যাঁচানো গুহার মত
      অমাবস্যার রাতের মত
  কী একটা নেশা আছে;
  তার সুরে ভেসে যাই
            কোথাও ডুবে যাই,
আলোড়ন তৈরি হয়। সবকিছু লাগে অপাঙক্তেয়।
তুমি আমার হারানো ভাষা,
       বোবা মনের করুণ আশা,
    সবকিছু ঠিকই আমি যখন চেয়েছি
তোমাকে কী পেয়েছি ?
   তুমি যে আমার সেই ছোট্ট চারুলতা।
লতায় লতায় জড়িয়ে - মৃদু আলাপে হেঁসে
     উধাও হয়ে যাও কোনখানি।
মস্তকে জড়ানো চাপ,
    আমার উপরে তাপ;
  সেই কালের রবিশশী
তুমি যে শরৎ,
      তুমি কেবলি বসন্ত,
   চারুলতা তুমি নাহ গো মনে শেষ।