অচিন্ত্য এসে গেছে গো, অচিন্ত্য!
কাকভোরের সেই প্রভাতে।
পঞ্চবটি পেড়িয়ে, গোবরডাঙ্গার মোদের পোড়াবাড়িতে।
সেই কচি ছেলেটা। কতটুকু বা বয়স তার।
গিন্নী বলল,
অনেক কষ্ট করেছ, একটু বিশ্রাম করো তো বাছা।
সে আবেগের হাঁসি দিয়ে বলল,
"মোদের জীবনে কষ্টের কথা বলছেন?"
কষ্ট কী সেটা আমরা টের পাই।
এই তো ছেড়া জামাটা নিয়ে-
কত দিগন্তেই না বেড়োতে হয় আমাকে
কত ঝড় বাদল না মারিয়েছি আমি।
ছুটেছি কেবলি ছুটেছি।
খালি পায়ে কেবলি পেয়েছি অসুখ।
তবু ব্যথা জাগে না।
সারা পৃথিবীটা যেন চেনা হয়ে গেছে।
মাটির কণ্টক এখন আর কষ্ট দেয় না - তপনের প্রদাহে আর চোখ বুঝায় না।
এই তো বেরোলাম পরশু।
দুই মাইল অন্তর অন্তর মোর প্রাণটা বুঝি বেড়িয়ে যেত।
তবু আমি চাই না বিশ্রাম,
না চাই কোনো দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে।
কারণ, মোর আশায় ওরা বসে আছে।
কত কাল ধরে রয়েছে আমারি অপেক্ষায়।
আমার পদব্রজে ওরা পায় হাঁসির খোরাক।
চোখে জল বেরিয়ে যায় ওদের কান্নায়।
আহা, কী যে সুখ! দুই ফোঁটা জলের দাম-
তখনই বোঝা যায়।
আমি তাই বুঝি।
আমদের পাঠানোর মতন তো আর কেউ নেই।
তাই ওদের ভার মোদের নিতে হয়।
পৌঁছুলাম আজকে।
শত বাধা টপকিয়ে।
আমার যে শেষ গন্তব্যস্থল।
একটুখানি বিশ্রামই নিলাম, তাতে কী আসে যায়!
আমার তো আহামরি এই কাজ।
হাজারো বেদনার মাঝে- আপনারা যে পেয়েছেন হাঁসির সংলাপ।
আর দুঃখ নেই আমার
কারণ, অচিন্ত্য এসে গেছে।