দিনদুপুরে মাথায় সূয্যি গগন চওড়া আঁখি
পড়িল বেলা সাঁঝবেলাতে উঠোন প্রদীপ জ্বালি।।
উঠোনের পাশে বৃহৎ অশ্বত্থ ঘন কালো আবছায়া
রাত্রি পড়িলে সাহস হতনা পাড় করিত ত্রিসীমানা।।
ভোর হইলে শিউলি দোপাটি তুলিত কোন ছায়
অশ্বত্থটির গায়ে জড়িয়া ধরিয়াছে ছমছমে সায়।।
রয়েছে তার বাঁকানো হাত আঁকাবাঁকা শাখী
রাতের ছায়ায় লাগিত যাহার ভূতুড়ে হাতছানি।।
তাহার চারিপাশে আছে তুলসী, আগাছা দিয়া ঢাকি
ওরে দিপু ওরে পুটি তুলে নিয়ে যা কয়েকখানি।।
পাশে চিনিয়া হরিৎ ক্ষেত, ভাসিত সাদা মেঘের ডালি
তাহার মরা ডালে প্রাণ ভরিয়া দিত পাখির কলকাকলি।।
একদা বলিল অশ্বত্থ "ঝড়িয়া পড়িয়াছে মোর পাতা,
তবু তোমরা ছড়িয়াছ কীসে"?
আমার ছাওয়ে সারি সারি বাড়িঘর পড়ে রহিয়াছে পিছে।।
দাঁড়িয়া রহিয়াছে বিশাল জাম, কাঁঠাল তাহার চারিপাশি
তাহার নির্জন ডালে বসিয়া খেত কাঁচা আমের আঁটি।।
দাঁড়িয়াছিল এটির প্রাণ মান্ধাতার সময় ঘিরিয়া
স্তূপের ন্যায় টিকিয়াছিল উঠোনের মাঝখানে বসিয়া।।
সকাল হইলে চাহিয়া দেখিত শিশুদের কোলাহল
থুরথুরে শিকড় নড়বড়ে ডালা এটির চলন এখন বিকল।।
ছোট প্রাণ চড়ুইভাতি ধরিয়াছে ইহার কোলে
নীরব মঞ্চে বসিয়াছে তুলসীমঞ্চ ইহার ছাউনি তলে।।
দুপুর হইলে ইহার ডালা করিত খটমট শব্দ
যেন লাগে ধরিয়া খাবে ফুটফাট হৈয়া সতর্ক।।
পূর্ণিমার দীপ্তি ইহাকে ধরিয়া চলিয়া যেত অন্যলোকে
অমাবস্যার নিকষ আঁধার ইহাকে ডাকত ভূতুড়ে।।
ইহার রহিয়াছে দমকা অতীত লোকমুখে হইত ফিসফিসে
রয়েছে পেত্নী রয়েছে শাকচুন্নি গাছের আগায় বসে।।
একদিন হঠাৎ কালবৈশাখী ইহাতে পড়িল আছড়ে
গেল ডাল ভাঙ্গিয়া পড়িল শাকচুন্নি পলায়ে।।
রয়েছে পড়িয়া সটান দেহ সম্মুখ পানে চেয়ে
তাহার গুড়ি আস্ত টিকে নিথর প্রাঙ্গণ ভরিয়ে।।
লোকের মুখী হল ইতি ইহার ভাঙা গড়ন দেখিয়া পাড় হইবে জনগণ নির্দ্বিধায় রাত্রিতে ইহার প্রাঙ্গণ মারিয়া।।