বটবৃক্ষের শেষ আশ্রয় থেকে অসময়ে ঝরে পরা পাতার দীর্ঘশ্বাস আমি।
বৈশাখীর তাণ্ডব ঝড়ে সর্বস্ব হারানো নীড় হারা ডানা ভাঙা পাখির দীর্ঘশ্বাস আমি।
সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া শিশুর কান্নার ধ্বনি শুনতে না পারা মায়ের বুকের ভেতর টা দুমড়ে মুচড়ে যাওয়ার দীর্ঘশ্বাস আমি।
ধর্ষিতা কিশোরীর সব হারানোর যন্ত্রণায় নিজেকে শেষ করতে না পারার দীর্ঘশ্বাস আমি।
রাস্তার ধারে বসত করা পিতৃপরিচয় হীন শিশুটির পরিচয় খুঁজে না পাওয়ার দীর্ঘশ্বাস আমি।
স্বামীর আদর সোহাগ থেকে বঞ্চিত হওয়া নির্যাতিত নারীর দীর্ঘশ্বাস আমি।
নিষিদ্ধ পল্লীর প্রতিরাতে হাত বদলে সীমাহীন যন্ত্রণায় কুকরে যাওয়া মেয়েটির কারো ঘরের ঘরণী হতে না পারার দীর্ঘশ্বাস আমি।
পাঁজর ভাঙ্গা বৃদ্ধের সন্তানের বোঝা হয়ে গৃহ থেকে বিতাড়িত হওয়ার দীর্ঘশ্বাস আমি।
প্রেমিকের হাত ধরে ঘর ছাড়া বালিকার জুয়ার আড্ডায় বিক্রি হয়ে যাওয়ার দীর্ঘশ্বাস আমি।
আশ্রয়হীন মানুষের গৃহের সন্ধান না পাওয়ার দীর্ঘশ্বাস।
মধ্যবিত্ত পরিবারের সংসার খরচ চালাতে না পারা বাবার কাউকে মুখ ফুটে বলতে না পারার দীর্ঘশ্বাস।
রাতের পর রাত প্রতারিত হওয়ার যন্ত্রণায় মৃত্যু ভয়ে আত্মহনন না করতে পারার দীর্ঘশ্বাস।
পথে পথে ঘুরে মাথা নিচু করে বাড়ি ফেরা বেকার ছেলেটির চাকরি না পাওয়ার দীর্ঘশ্বাস।
রূপহীন,খাটো,কালো,বোবা মেয়েটির উপযুক্ত বয়সে বিয়ে দিতে না পারা অসহায় বাবার দীর্ঘশ্বাস।
আমি সেই নষ্ট মেয়ের বুক চিড়ে বেরিয়ে আসা তীব্র দীর্ঘশ্বাস,যে পরিবারের বোঝা মাথায় নিয়ে রাজপথে নেমেছিল সেই রাজপথের বিবেকবান উঁচু শ্রেণীর মানুষ গুলো তাকে নষ্ট মেয়ের উপাধি দিয়ে সমাজ কে করেছে পবিত্র।
আমি হচ্ছি শত সহস্র জনমের তীব্র দীর্ঘশ্বাস।
এই পৃথিবীতে রবে যতদিন প্রাণের বিচরণ দীর্ঘশ্বাস হয়ে আমি রব ততদিন।জন্ম জন্মান্তরের পথে এ যেন আমার অবাধ বিচরণ।
যুগের শেষ হয় কালের বিবর্তনে প্রকৃতি বিলীন হয়।
কিন্তু আমার এ দীর্ঘশ্বাসের মৃত্যু হয় না।