কেন আমি তোমাদের রক্তচক্ষু দেখতে যাবো? কেন তোমাদের ক্রোধের দাবানলে পলে পলে দগ্ধ হবো? কেন কেবল আমাকেই সইতে হবে সকল অনাচার? নাকি মুখ বুঁজে এক কোণে পড়ে থাকি বলেই এমন অবিচার? তোমাদের কি ধারণা আমার কষ্ট হয় না? ভীষণ কষ্ট হয়, কেবল আর সবার মত চিৎকার করে প্রকাশ করতে পারিনা।
আচ্ছা বলতে পারো..  কি আমার দোষ..? আমি কি চেয়েছি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, হাই কস্টলি গাড়ি, বহুমূল্য জুয়েলারি? এসব তো কিছু চাইনি আমি। হ্যাঁ, আমি চেয়েছি খুব সাধারণ ছোট্ট একটা ঘর, যেখানে আমার চাহিদার যৎসামান্য আসবাবপত্র খাট, আলনা, নিজেকে দেখবার জন্য স্বচ্ছ একটা আয়না, আমার প্রিয় কবিতা উপন্যাসের বইয়ে ভরা একটা বুক সেলফ, জানালা ঘেঁষে একটা ছোট্ট টেবিল যার একপাশে একটা টেবিলল্যাম্প, অন্য পাশে ফুলদানিতে তাজা রজনীগন্ধার গুচ্ছ। খোলা জানালার নীল পর্দা ঠেলে ঝিরঝিরে হিমেল হাওয়া এসে আমার কপালের ফিনফিনে চুলে পরশ বুলিয়ে যাবে, রাতে চাঁদের জোছনা আমার নিশাচর মনকে কবিতা লিখতে উদ্বুদ্ধ করবে। এমনি আমার নিজ হাতে খুব সাজানো গোছানো একটা নির্মল সুন্দর ঘর, যেখানে থেকে আমি শুধুই সুখ আর শান্তির কাব্য রচনা করবো। যার প্রতিশ্রুতি তোমরা আমাকে দিয়েছিলে। কিন্তু হায়!
ভাগ্য আমাকে এমনি এক কর্কশ পরিবেশ উপহার দিয়েছে যা আমার সকল ভাষা কেড়ে নিয়েছে। তথাপিও কোনো অভিযোগ নেই আমার। দুটি চোখে জমে থাকা অফুরন্ত অপূরণ স্বপ্নকে দাফন করে দেই ভারি কাজলের দেয়াল টেনে। আমার দুটি ঠোঁটের সহস্র তৃষ্ণাকে গোলাপি লিপস্টিকের রঙের আড়ালে ঢেকে রেখে একরাশ মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে রাখি তোমাদের মর্যাদা রক্ষার্থে। তোমরা তোমাদের হিসেবের খাতায় পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেবে কষে লিখে রাখো কবে কখন আমাকে তেল, নুন, মরিচ দিয়ছো। পক্ষান্তরে আমি বেহিসেবী দোয়া, হাসি আর ভালোবাসা ঢেলে দেই নির্দিধায় তোমাদের তরে।