বৃদ্ধাশ্রম এর চিঠি
বৃদ্ধাশ্রম থেকে পত্রই আসিল
সকালের গরম খাস্তা টেবিলে ,
"ও পারিনা" বলে উঠি গেল ছেলে
কাটেনা সময় আর নিরিবিলে।
বছর বছর এমনি করেই
ফি বছর পুজোর সময় এলে ,
লাল খামে মোড়া একখানি পত্র
পিয়ন টেবিলে দিয়ে যায় চলে।
ঘরের লক্ষী ঝঙ্কার নেড়ে বলে
"আমার মা, সেও তো বাড়িতে একা" ,
ভাবছি পুজোয় আনবো এখানে
সবাই মিলে পূজোটা হবে দেখা।
ভিতরের রাগ করেনা প্রকাশ
বাধ্য স্বামী বোঝে সব সারাবেলা ,
ঘুমিয়ে পড়িলে বাড়ির প্রকোপ
ছেলে মাকে ফোন করে রাত্রিবেলা।
হাজার কথা উঠে আসে তবুও
বৃদ্ধার কথা বলে না কেউ আর ,
ইচ্ছা করিলেও পারেনা আনিতে
অসহায় ছেলে কেঁদে একাকার।
উঠুক না ঝড় এলোমেলো রবে
মিথ্যা যদি যায়-যাক দূরে চলে ,
আপোশের মাঝে নাই থাক ঋণ
রাত্রির মুখ কেঁদে কেঁদেই বলে।
অন্ধকারে লেড লাইটের পাশে
মাথা তুলে জেগে থাকে স্তব্ধ ঘুম ,
বন্দি খাঁচার মাঝে প্রহর জাগে
বয়সের ভারে অপেক্ষা নিঝুম।
সামনে দেখানো নাটকের রঙে
ক্লান্ত সঙ্গী আলমোড়া দেয় পাশে ,
রাত্রি জাগে সখা, এবং একাকী
জাগে নয়ন, চিঠি পড়ার আশে।
অশ্রু জলে মাখা মাখি চিঠি খানি
ক্লান্ত ভরা শুধু অপেক্ষার ছাপ ,
কেবল তাতে শুধু আশীষ বাণী
ছোঁড়া নেই তাতে কোন মধু তাপ।
এসেছিলি সেই গত বছরেই
অনেকদিন হয় নাই তো দেখা ,
ভাবি শুধু তাই সময় সময়
কারণ সারাটা সময় তো একা।
ভালো আছিস তোরা সবাই মিলে ?
দু'বছর হল বাবাটাও নেই !
তাই বোধহয় নিশ্চিন্ত সবাই
আবছা দৃষ্টি হারিয়ে ফেলে খেই।
ভাবিস না মোটে আমি স্বার্থপর
লক্ষীকে বলিস "আমি ভালো আছি" ,
ঘর থেকে যেদিন এসেছি হেথা
ছেড়ে এসেছি সেথা সুখের কাছি।
এইখানে সেই সংসার নেই বটে
তবে আছে নিয়মের বেড়াগন্ডি,
তোদের মত বেনিয়ম তো নয়
নইতো আমি তোদের পায়ে বন্দি।
বলেছিলি - এবার আসুক পুজো
প্রহর গুনে পুজোর কথা ভাবি ,
মহালয়া সেও এলো সামনেই
"এবার পুজোয় বাড়ি নিয়ে যাবি"?