দার্শনিকের কি মৃত্যু ভয় থাকতে আছে?
কিন্তু সেও তো মানুষ!
নাকি জীবনবোধে সম্পৃত্ত যে মন
মৃত্যু ভয় সেখানে অকেজো হয়ে যায়।
কারাগারের ভিতরে সেদিন
প্রিয় শিষ্য ক্রেটো এমনটাই হয়তো
জিজ্ঞাসা করেছিল তার শিক্ষককে।
শুধু তার কেন
সমগ্র মানবজাতির ভাবিকালের যিনি প্রবক্তা
তাকে দেখতে সেদিন কারাগারের বাইরে ভিড় করেছিল
অসংখ্য নরনারী।
কিছুক্ষণ আগে দার্শনিকের পত্নী এসেছিলেন
তাদের সন্তানদের নিয়ে -
অনেক অনুরোধ করলেন এই বলে,
"ফিরিয়ে নাও তোমার শিক্ষা,
রাজরোষ থেকে বাঁচার একমাত্র রাস্তা
ভুল স্বীকার করা।"
মুহূর্তে সহস্র লক্ষ সূর্য জ্বলে ওঠে
আরক্ত দু চোখে,
গোধূলির ম্লান আলোতে প্রজ্বলিত কারাকক্ষ
সেদিন সাক্ষী থাকল
মানবতার অমর সব বাণীর।
"আমার শিক্ষা যদি তোমরা গ্রহণ করতে অক্ষম হও
তবে আমকেই সভ্যতার স্বার্থে
সেই বিশ্বাস কে প্রতিষ্ঠা করে যেতে হবে -
আর তার জন্য যদি রাষ্ট্র আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়
তবে জানবে সেই রাষ্ট্রের আদেশের পিছনে যে দর্শন
তারও যে প্রবক্তা আমি -
সে আদেশ আমাকে মানতেই হবে।"
হতাশ মনে ফিরে গেলেন সেই জননী,
ফিরে গেলেন আরও অনেকে
যারা দার্শনিকের মৃত্যুদৃশ্য প্রত্যক্ষ করার
কঠিন হৃদয় নিয়ে আসেননি।
দার্শনিক ব্যস্ত রইলেন তার শিষ্যদের নিয়ে।
ধীর স্থির ভাবে জবাব দিতে থাকলেন
তাদের সব প্রশ্নের।
অন্ধকার যতো ঘনিয়ে এলো
ততোই উজ্জ্বল হতে থাকল কারাগারের ভেতর
সেই জ্যোতিষ্ক -
বাতাসে তখন অবিনশ্বরতার গন্ধ।
নিতান্ত অবহেলায় তুলে নিলেন হেমলকের পাত্র খানি,
তার তর্জনী তখনও উদ্ধত!
দৃপ্ত কণ্ঠে তিনি ঘোষণা করলেন,
আমার কোনদিনই সে অর্থে বিনাশ নেই।
প্রতিটি ধ্বংসের মধ্যে
আমার আবার জন্ম জেনো।
আমি আসব, বার বার
সূর্যের দৃপ্ততাকে সাথে নিয়ে
বাতাসের ধ্বনির তালে তালে,
সমুদ্রের হিল্লোলের মাঝে
সঞ্চারিত রবে আমার চেতনা।
এতটা বলার পর তাকে একটু
ক্লান্ত দেখালো,
তবু তার তর্জনী তখনও আগামীর দিকে উদ্দিষ্ট।
প্রিয় শিষ্যদের দিকে চেয়ে শেষবারের মতো
তিনি হেসে বললেন,
"মৃত্যু কোন কিছুর সীমানা হতে পারে না
বরং সে এক নতুন যাত্রার সোপান মাত্র।
আজ আমি ভীত নই -
কারাগারের এই চার দেওয়াল আমার
মুক্ত সত্তাকে আজ আর বেঁধে রাখতে পারবে না,
আজ শুধু আমি অপেক্ষা করবো
নতুন এক সূচনার,
আর ভাববো মৃত্যু কত সুন্দর।।"