যেদিন শ্বশুর বাড়িতে ঢুকলাম,
তার পরের দিন শ্বশুর বললেন,
'মা, সকলকে লুচি করে খাওয়াও'।
গোটা পঞ্চাশ লোক হবে!
শাশুড়ি মা বললেন, 'এবার আমি মুক্তি চাই'।
স্বামী আমাকে বলেন, 'সকলের সেবা করতে পারবে তো'!
পেটে বাচ্চা নিয়ে ঘর মুছেছি
আর কাঁকে বাচ্চা নিয়ে রান্না করেছি।
একএক জনের একএক রকম ফিরিস্তি,
একএক জনের একএক রকম লাঞ্ছনা।
ভাগ্যিস দুটি যমজ ছেলে হয়েছিল,
নইলে রান্না ঘরেই আমার ঠাঁই হতো না
একটুখানি ঘামের অবকাশ নেওয়ার!
বিজ্ঞান বলে, ছেলে অথবা মেয়ে হওয়ার জন্য দায়ী বাবা,
কিন্তু সমাজ দোষ দেয় মাকে।
বিয়ের পর মেয়ে পর হয়ে যায়-
শ্বশুর শাশুড়িই নিজের মা বাবা।
সব দায় যেন আমার-
সেবা যত্ন
আবার যত দোষ নন্দ ঘোষ।
দুজনেই আমার কোলে মাথা রেখে মরলেন।
নিজের মা বাবার মরণ কালে যেতে পারিনি।
স্বামীর ইচ্ছাই আমার ইচ্ছা।
স্বামীর চাহিদাই আমার চাহিদা।
স্বামীর উন্নতি মানে আমারই উন্নতি।
নিজের আশা আকাঙ্ক্ষা সন্তানদের মধ্যে বিলিয়ে দিলাম।
দুই ছেলে বিয়ে করে বৌ আনলো ঘরে-
সব চাকরি করা বৌ।
আগের যুগে ছেলেরা বিয়ে করতে যাওয়ার সময় বলে যেত,
'মা, তোমার জন্য দাসী আনতে যাচ্ছি'।
এ যুগে আর বলে না।
রান্নার লোক কোথায় পাবো-
আজ আছে তো কাল নেই!
কাজের লোকে মাসে চারবার কামাই করে।
কে আর সামলাবে?
গোটা জীবনটা হেঁশেলেই কেটে গেলো।
ও এখন একটু বোঝে-
যখন হাঁপাই, তখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, এই অনেক।
শেষ জীবনেও বিশ্রাম পেলাম না,
তবে খুঁটিটা এখনো পোঁতা আছে এটাই শান্তি!