বেতবেড়িয়া ঘোলা,
ক্যানিং লাইন-এ,
বিশেষ কাজের সূত্রে যাওয়া।
আমি কলকাতার বাসিন্দা-
শিয়ালদহে থাকি।
আমাদের সামাজিকতা আছে
কিন্তু পাড়াগাঁতে সামাজিকতা কোথায়?
কত হেয় করা...
যার বাড়িতে গেলাম,
নাম শিবানন্দ।
লটারিতে পাঁচ লক্ষ পেয়ে
জলা জমিতে পাকা ঘর তুলেছে,
কলকাতার ফ্ল্যাট-এর থেকে
স্নিগ্ধ শান্ত ও মনোরম-
আধুনিক আসবাব নেই,
আছে মনের টান;
এসি নেই অথচ আছে প্রকৃতির প্রাণের হাওয়া।
এখন পাড়াগাঁ-তে পাকা রাস্তায় টোটো চলে,
প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুৎ, গ্যাস,
দোকান, বাজার ও আধুনিক ডাক্তারখানা।
কি যত্ন?
কলকাতার কোনো ফ্ল্যাট-এ এত যত্ন পাইনি-
কারণ মন প্রাণ কংক্রিট-এর জঙ্গলে আবদ্ধ।
চা বিস্কুট, মিষ্টি, ফলাহার, সাথে কোল্ড ড্রিংক।
শিবানন্দের স্ত্রী বললেন,
'লুচি করে দেবো'?
লজ্জায় 'না' বলে দিলাম।
হাতে করে কিছু নিয়ে আসিনি-
আমি কলকাতার অসভ্য মানুষ।
পাড়াগাঁ-এ এখনো বহু সভ্য মানুষের বাস।
হাঁস মুরগি পোষে।
ডিম বাজারে বিক্রি হয়।
ব্যাঙাচির আকারে কই মাছ এনে চৌবাচ্চায় চাষ করেছিল-
বাজারে বিক্রি করে প্রচুর কামিয়েছে।
নিজেরা কেটে খায়নি-
সন্তানকে কাটা যায়!
শহরের লোক যেভাবে গাছ কাটে,
একদিন প্রজন্মই নষ্ট হয়ে যাবে।
শিবানন্দ ডাব, নারকেল, তাল ও সুপারি
বিক্রি করে বাজারে।
ওর স্ত্রী বালিগঞ্জে দুটো বাড়িতে রান্না করে।
এক ছেলে, এক মেয়ে, ছেলের সংসার আছে,
একই সাথে থাকে, দেড় বছরের নাতি।
ছেলের কাপড়ের ব্যবসা।
কি মিল, অথচ শহরে বেশিরভাগ যে যার!
শিবানন্দ বললো,
'ছেলে মেয়েকে গ্রাজুয়েট বানিয়েছি। বৌমাও গ্রাজুয়েট'।
হাতে টাকা দিয়ে আসা খারাপ দেখায়,
এ সম্পর্ক কলকাতার টাকার সম্পর্ক নয়-
তাই বলে দিলাম,
'তোমার নাতি বহু দূর লেখাপড়া শিখবে। বংশের মুখ উজ্জ্বল করবে।
তোমার সংসারে কোনো দিন ভাত কাপড় আর সুখ শান্তির অভাব হবে না।
তোমার মেয়ের ভালো বিয়ে হবে'।
বলতে বলতে চোখে জল এল-
এত আদর যত্ন খুব কম জায়গায় পেয়েছি।
যাদের হেয় করেছি, তারা আমার থেকে বড় মানুষ।
মানুষ হয়েই কলকাতায় ফিরবো।
আশ্চর্য শিয়ালদহে নেমে একটুও হাঁপ লাগলো না...