ঘড়ির কাঁটায় সময় থমকে দাঁড়ায় না,
থমকে দাঁড়ায় অবহেলিত জীবনের কিছু মুহূর্ত।
থামে জীবনের কিছু গল্প, জমে থাকা শ্বাসের মতো।
একদিন, হঠাৎ করেই যেন বুকের ভেতর দীর্ঘশ্বাস জমে থাকা ফুসফুসটা ধক্ করে নড়ে ওঠে।
মনে পড়ে যায়—যৌবনের এক টুকরো উজ্জ্বল জীমূত,
শুকতাঁরার মতো ঝলমলে, অথচ স্পর্শহীন।
বুকের ভেতর কোথাও জমে থাকা হাওয়া যেন চিৎকার করে বলে উঠে—
"মনে পড়ে, সেই সময়? যেখানে তুমি ছিলে, আর ছিল আমার বেঁচে থাকার উদ্দামতা।"
সেদিন কি জানতাম, সময় এমন চুপিচুপি এগিয়ে যাবে?
ফেলে আসা দিনগুলো কি সত্যিই এত অপ্রয়োজনীয় ছিল যে—
তাদের অনাদৃত রেখে সামনে ছুটে চলেছি?
জীবনের ভাঁজে ভাঁজে জমা হয়ে আছে সেই সব স্মৃতি,
যা দেখলে মনে হয়—সময়ও কাঁদতে পারে।
এই নড়েচড়ে ওঠা বুড়ো ফুসফুস যেন জীবনের শেষ দাবিটুকু জানিয়ে যেতে চায়।
বলার চেষ্টা করে—“আমাকে ভুলে যেও না। আমি তো ছিলাম তোমার সঙ্গে, প্রতিটি শ্বাসে, প্রতিটি দৌড়ে, প্রতিটি কান্নায়।”
শুকতাঁরার মতো সেই যৌবন শুধু আকাশে ভেসে থাকা আলোর রেখা নয়,
তা এক টুকরো জীবনের সাক্ষীও বটে।
আজ, যখন নিঃশ্বাসের শব্দ ক্রমশ কমে আসে,
যখন বুকের ভেতর শুধু অতীতের ঢেউগুলো আছড়ে পড়ে, তখন বুঝি—
জীবনের প্রতিটি অবহেলিত মুহূর্তই একেকটি শুকতাঁরার গল্প।
সেই গল্পে হারিয়ে যাওয়া আর ফিরে পাওয়ার তাড়না মিশে যায়।
ঘড়ির কাঁটা কেবল সময়ের প্রহর গুনে যায়,
আর আমরা, প্রতিটি নড়াচড়ায় একটু একটু করে বুঝি,
জীবন তো আসলে—
পিছিয়ে পড়া ক্ষণগুলোর গভীরতায় বাঁচে।
অতীতের প্রতিটি জীমূত এখন ঝরে পড়া বৃষ্টির মতো।
সময় থেমে যায় না, কিন্তু আমরাই থমকে যাই।
আর ঘড়ির কাঁটা? সে কেবল স্মরণ করিয়ে দেয়—
বয়স বাড়ে কিন্তু, স্মৃতি রয়ে যায়,
আর জীবন...
সে তো কেবল হারিয়ে ফেলা যৌবনের প্রতিধ্বনি।
==========