অহংকার যেন এক তৃষ্ণার্ত নদী,
নিজ গর্ভে সবাই আকাশকুসুম স্বপ্ন গিলে ফেলে।
যখন নিজেকে ভাবে সবার উপরে—
তখন নিজেরই ছায়ায় ঢেকে যায় আশপাশের আলোর ঝলক।
কী এক অদ্ভুত আনন্দ, নিজেকে অসীম ভেবে বসে থাকা!
জানি না, অহংকার কীভাবে মনের মধ্যে বাসা বাঁধে,
কীভাবে সে চোখে এক অদৃশ্য পর্দা টেনে দেয়।
কিভাবে নিজেকে বুঝে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ!
কিভাবে ভাবে, অন্যের শূন্যতাকে এক লহমায় মুছে দিতে পারি?
এ অহংকার কি আদৌ আত্মবিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি,
নাকি এক মোহমায়া—
যা ছায়ামূর্তির মতো তাড়া করে!
অহংকার যেন এক মায়াবী বিভ্রম,
যা চোখে আনে গর্বের আভা,
অথচ অন্তরে বুনে যায় শূন্যতার বীজ।
অহংকারী নিজেকে দেখে এক অনন্য উচ্চতায়,
অন্যের থেকে আলাদা, একটু উঁচুতে, একটু বেশি উজ্জ্বল।
ভাবে, এই মহত্ত্ব শুধু তাঁহারই,
যেন তিনিই জগতের কেন্দ্রবিন্দু।
একদা অহংকারের এই আসনে বসে দেখেছি,
চারপাশের মানুষ কেমন ধীরে ধীরে দূরে সরে যায়।
চারপাশে যেন এক নির্জনতার দেয়াল গড়ে ওঠে,
যে দেয়াল কেবল আমাকেই বন্দী করে রাখে।
অহংকারে ডুবে থাকা এক অসীম একাকীত্ব,
যা একসময় নিজেরই ছায়ার মুখোমুখি দাঁড় করায়।
কিন্তু কখনও কখনও মনে হয়,
অহংকারে কি সত্যিই কিছু আছে?
এই অন্ধকারের মধ্যে নিজেকে অসীম ভাবার আনন্দে কি কোনো সান্ত্বনা আছে?
হয়তো না।
অহংকারের পর্দা সরালে দেখি, আসলে আমি কিছুই না,
এক সামান্য বিন্দু, এক বিন্দুরও ছোট!
সেই ছোট্ট বিন্দুতে মিশে যায় আমার অহংকার,
মুছে যায় মোহ, আমার অস্তিত্ব।
তখন আমি আবার খুঁজে পাই নিজেকে,
অহংকারের ছাপহীন এক নির্মল আমি।
কখনও কখনও ভাবি,
এই অহংকারই কি অন্তরের অন্ধকার!
যে কিনা, এক বিষাদের সমুদ্রে ডুবিয়ে দেবে?
হয়তো একদিন আমরা বুঝব, সব অহংকার'ই মিথ্যা।
হয়তো সেই দিন নিজেদের আবার খুঁজে পাব,
নিজের ভগ্নাংশের মধ্যে সত্যের স্পর্শ খুঁজে ফিরব। তখন আমরা হব শূন্য;
অহংকারহীন, নির্জীব নির্ভেজাল এক শূন্য,
যেখানে অহংকারের আর কোনো স্থান নেই।
=========