কিছু মানুষের ভেতরে একটা আশ্চর্য আত্মবিশ্বাস কাজ করে।
তারা মনে করে, নিজেদের আলাদা কোনো উঁচু স্থানে স্থাপন করেছে।
অন্যের ভুলগুলো তীরের মতো তাদের চোখে লাগে,
মনে হয় তাদের দায়িত্ব হলো সেই ভুলগুলোর বিচার করা।
অথচ তারা নিজের দিকে তাকায় কি?
নিজের সকল চলায়, বলায়, করায়, ঝাপসা একটা অগোছালো ধোঁয়া।
তবু কেন যেন মনে হয়, তারা বড় পণ্ডিত একেলা!

জীবনটা আসলে এক আয়নার মতো।
নিজের দিকে তাকিয়ে সবই দেখা যায়,
কিন্তু আমরা কেবল সেই আয়নার পিছনেই লুকিয়ে থাকি,
যেখানে কেবল অন্যের অবয়বটাই স্পষ্ট হয়।
নিজেকে নিখুঁত ভাবে দেখার ক্ষমতা যেন খোয়া গেছে কোথাও,
মনের অহংকারের গহীনে চাপা পড়ে আছে।
আমরা মুখে মুখে একেকজন যেন একেকটি বই,
যেখানে পাতায় পাতায় গর্ব, অহংকার আর অন্ধত্ব লেখা।
সেই বইয়ের প্রথম পাতাতেই লেখা থাকে, "আমি জানি,"
শেষ পাতাতেও সেই একই কথা, "আমি জানি"।
কিন্তু সত্যি কি আমরা জানি?
নাকি কেবল জানার অভিনয় করি?

আমরা সবাই একেকজন স্বঘোষিত পণ্ডিত,
নিজের চোখে নিজেই সবজান্তা শমসের।
অন্যের ভুল খুঁজে খুঁজে বেড়াই,
যেন ভুল ধরার দায়িত্বটুকু কেবল আমারই।
চোখে পড়ে সেই সামান্য ত্রুটিগুলো—
কোথায় ত্যাড়া, কোথায় বাঁকা, কোথায় আবার নাকটা খাঁড়া!
দাড়ি কালো, চুল বড়, কে আবার চশমা পড়লো!
কার চলন বাকা? কে থাকে একা! কার সাথে করে দেখা?
পন্ডিত মনে করে, এই তো! ভুল ধরলাম, এই বুঝি প্রমাণ হলো আমি কতটা মহাজ্ঞানী!

কিন্তু নিজের দিকে কি আমরা একবারও তাকাই?
নিজের যে ভুলগুলো লুকিয়ে আছে, যেখানে নেই কোনো শৃঙ্খলা,
সেই ব্যাপারটা কি আমাদের চোখে পড়ে?
নিজের প্রতিটি চলায়, প্রতিটি বলায়, প্রতিটি করায় যে ভুলগুলো আছে—সেই অগোছালো ভাবটা কখনো নজর কাড়ে না।

তবু, অহংকারের বোঝা বয়ে চলি,
মনে মনে ভাবি আমি বুঝি এক বিশাল বড় পণ্ডিত,
পৃথিবীর সকল জ্ঞান আমার মুঠোয়।
মনের ভেতর জমে থাকা সেই ভুলে ভরা আয়নায় তাকানোর সাহস কোথায়?
যেদিন সাহস করে নিজের দিকেই সেই আয়নাটি ঘুরিয়ে দিবে—
সেদিন হয়তো সত্যিকারের পণ্ডিতের দেখা পাবে,
দেখা পাবে নিজের ভিতরেই ভুলে ভরা এক নির্লজ্জ মহাপণ্ডিত।