নগরীর গভীর অন্ধকারে ঘনিয়ে আসে মধ্যরাত।
চারদিকে সুউচ্চ অট্টালিকার জাল,
যেন আধুনিক কারাগার—
যেখানে অপার ঐশ্বর্যের মাঝে গুমরে ওঠে এক অব্যক্ত হাহাকার।
শহরের আলোকিত রাস্তাগুলোতে যখন কোলাহল থেমে আসে,
অসহায় একাকিত্ব যেন প্রতিধ্বনিত হয় চারপাশে।
সেই অন্ধকারেই কোথাও যেন জ্বলে ওঠে এক অনির্বাণ শিখা,
অন্তরের গভীরে লুকানো বিদ্রোহের অগ্নি,
যার কুণ্ডলী পাকানো দীপ্তিতে ফুটে ওঠে জীবনযুদ্ধের স্পর্ধা।

ধূসর মরুভূমির মতো এই নিষ্প্রাণ শহরে—
কিছু মানুষের শ্বাস হয়ে ওঠে তপ্ত,
তাদের নিঃশ্বাসে যেন মিশে থাকে বেঁচে থাকার দুরন্ত আকাঙ্ক্ষা।
কোটি জনতার অব্যক্ত কষ্ট,
তাদের স্বপ্নভঙ্গের বেদনা আর হতাশা বয়ে বেড়ায় নগরীর বস্তিগুলোতে।
তারা জড়িয়ে আছে কঠিন শৃঙ্খলে,
জড়িয়ে আছে কালো আইন আর অন্যায়ের বেষ্টনীর মধ্যে,
অথচ সেই বেষ্টনী ভাঙার প্রতিজ্ঞা তাদের থামায় না।
তাদের দৃঢ় বিশ্বাসে প্রতিরোধের কণ্ঠস্বর উঠতে থাকে দিন দিন,
অনিবার্য বিস্ফোরণে ফেটে পড়ে প্রতিটি প্রাচীর।

নিস্তব্ধ নগরীর বুক চিরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে সুউচ্চ অট্টালিকা।
যত উঁচুতে উঠেছে তার গর্ব—
ততই যেন তার আড়ালে চাপা পড়ে গেছে শহরের অব্যক্ত হাহাকার।
এই নগরের রূপ যতটা ঝলমলে, ততটাই ভেতরে ভেতরে নিঃসহায়তার যন্ত্রণা জেগে ওঠে বারবার।
হৃদয়ের গভীরে জ্বলে ওঠা এক অগ্নিশিখা!
যেন আলোকিত করে ভেতরের অন্ধকার,
কুণ্ডলী পাকানো দীপশিখায় ধ্বংস করতে চায় সকল অবিচার।

এই নগরের বুকে এক মরুভূমির শ্বাস, শুষ্ক, তপ্ত,
যেখানে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখতে গিয়ে মানুষেরা হাঁপিয়ে উঠেছে।
তবু, তাদের মধ্যে জেগে থাকে বেঁচে থাকার অদম্য বিশ্বাস,
যে বিশ্বাসে কোটি জনতা পাড়ি দেয় প্রতিকূলতা।
তাদের বসতি ধ্বংস হয়,
রাস্তায় ভেসে ওঠে দারিদ্র্যের করুণ কাহিনী,
অথচ তারা বাঁধা পড়ে থাকে কালাকানুনের শিকলে,
যেখানে প্রতিটি মুহূর্তেই তাদের স্বপ্নকে গলা টিপে হত্যা করা হয়।

তবু, একদিন আসে, যখন এই জনতার কণ্ঠ থেকে ফেটে বের হয় প্রতিরোধের বিস্ফোরণ।
প্রাচীর ভেঙে চুরমার করে তারা এগিয়ে আসে সামনে,
লড়াই করে ন্যায্য অধিকারের জন্য, স্বাধীনতার জন্য।
তারা চায় এমন এক স্বদেশ—
যেখানে থাকবে মুক্তির নিশ্বাস, সম্মানের আশ্রয়।
এই বাসনার পথ হয়তো সহজ নয়,
কিন্তু তাদের প্রতিজ্ঞা, তাদের আকাঙ্ক্ষা,
এক মুহূর্তের জন্যও নতি স্বীকার করে না।
তাদের লড়াই শুধুমাত্র ক্ষুধার বিরুদ্ধে নয়,
বরং এক ন্যায্য অধিকার আর মুক্তির স্বদেশের জন্য।

========