বিবেকের দহন, এ যেন এক অন্তর্গত আগুনের লেলিহান শিখা,
যা সব সময়ই জ্বলছে, তবে চোখে দেখা যায় না।
কোথাও ভুল করেছি, কোথাও সত্যকে মাড়িয়ে গেছি,
আর সেই মুহূর্ত থেকেই এই দহন শুরু।
কোনো চিৎকার নেই, কোনো কোলাহল নেই—
শুধু নিঃশব্দে পুড়ে যাওয়ার তীব্র যন্ত্রণা।

সকালে উঠে আয়নায় চোখ পড়ে,
নিজের মুখটা দেখার সাহস হয় না।
প্রশ্ন আসে—এই আমি কি সেই আমি!
যে ন্যায়ের পথে হাঁটবে বলে প্রতিজ্ঞা করেছিল?
বিবেকের তীব্র তিরস্কার যেন সারাক্ষণ কানে বাজে,
এক মুহূর্তের জন্যও মুক্তি দেয় না।
যে কাজটি করলাম, সেটা কি ঠিক ছিল?
নাকি শুধুই নিজের স্বার্থের জন্য ন্যায়'কে ভেঙেছি?

সমাজের নিয়মে চলতে গিয়ে কতবার নিজের সঙ্গে আপস করেছি।
সুবিধার জন্য অন্যায়'কে মেনে নিয়েছি!
হয়তো ক্ষণিকের স্বস্তি পেয়েছি, কিন্তু ভেতরের সেই অদৃশ্য আগুন নিভেনি।
দিনের শেষে যখন চারপাশ নিস্তব্ধ হয়—
তখন বিবেকের জ্বালা আরও তীব্র হয়ে ওঠে।
অন্যের চোখে যা অদৃশ্য, আমার কাছে তা বাস্তবের চেয়ে বেশি বাস্তব।
এই যন্ত্রণার কোনো শেষ আছে কি?

বিবেক বলতে কি শুধু ভালো-মন্দের বিচার?
নাকি তা আরও গভীর, আরও তীব্র?
যখন নিজের আদর্শের সঙ্গে আপস করি, ভেতরের কণ্ঠটা চুপ হয়ে যায় না।
মুখ বন্ধ থাকে, কিন্তু সেই নীরব কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হয় প্রতিটি চিন্তায়, প্রতিটি স্বপ্নে।
ক্ষতগুলো গভীর হয়, আড়ালে থাকে, আর আমাদের পুড়িয়ে খায় নিঃশব্দে।

এখনো মনে পড়ে, ছোটবেলার সেই সরল দিনগুলোর কথা,
যখন ভালো-মন্দের মধ্যে তফাৎ স্পষ্ট ছিল,
যখন বিবেকের কণ্ঠস্বরকে অস্বীকার করার সাহস ছিল না।
কিন্তু এখন? এখন আমরা ব্যস্ত,
প্রয়োজনের দোহাই দিয়ে সেই কণ্ঠস্বরকে থামিয়ে দেই।
তবু, কোথাও একটা চুপচাপ সরোবরে জ্বলছে সেই আগুন,
নিঃশব্দে দহন করে চলেছে হৃদয়ের প্রান্তর।

এই দহন কি কখনো থামে?
নাকি প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাই করে চলি?
হয়তো কোনো দিন নিজেকে মুক্ত করতে পারি না।
বিবেকের এই অগ্নি যেন অনন্ত!
যেন এক অজানা, অতৃপ্ত দগ্ধ আত্মার সঙ্গী!
যা মনে করিয়ে দেয় কাকে আমরা হারিয়েছি,
কাকে হারিয়ে নিজেকেই ভুলে যাচ্ছি।

========