মহালয়ার পর থেকেই বাতাসে যেন পুজো পুজো গন্ধ,
নারীশক্তির আরাধনার জন্য গোটা দেশে সাজ সাজ রব-
কিন্তু আগমনীর সুরে আজ পরিবর্তিত হয়েছে আর্তনাদে।
বিশ্ব করোনার রোষানলে পীড়িত সবাই প্রাণ বাঁচাতে উদ্যোমী,
কিন্তু এই দুর্দিনে কিছু অসুর অতি সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
এই ভারতবর্ষের মাটিতে কুমারী পূজার চল রয়েছে বহুবছর ধরে,
অর্থাৎ সমস্ত নারীকে আদিশক্তির অংশ হিসাবে পূজা করা-
কিন্তু সেই দেশেই প্রতিদিন প্রায় ১০০ জন নারী ধর্ষনের শিকার হচ্ছেন।
দিল্লির রাজপথ থেকে পার্কস্ট্রীট, হায়দ্রাবাদ থেকে কাঠুয়া সর্বত্রই চিত্র টা একই-
কাশ্মীর থেকে কন্যা কুমারী অরুণাচল থেকে গুজরাট নারী সম্মান ভূলুণ্ঠিত।
বছর পেরোয় দশক পেরোয় নারী লাঞ্ছনার চিত্রটা কিন্তু অপরিবর্তিত থাকে।
আমাদের দেশে প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি পদে মহিলারা আসীন ছিলেন,
কিন্তু শুধু পদ দিয়ে আর মুখে মহিলা সশক্তিকরনের কথা বলেই কি দায় শেষ?
আমরা ভারত সরকারকে নিজ উপার্জিত অর্থ থেকে কর প্রদান করি,
সুরক্ষা ও প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা পাওয়ার আসায়!
কিন্ত আমাদের দেশের সরকার মা বোনদের সম্মান রক্ষা করতে অক্ষম।
আমরা নিজের দেশকে রামরাজ্য হিসাবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখি,
সেই রাম, যিনি আদিশক্তির অকাল বোধন করে দুর্গা পূজার শুভারম্ভ করেন,
সেই রাম, যিনি নারীর সম্মান রক্ষার্থে যুদ্ধ করেন-
আর ভারত এখন নারী লাঞ্ছনাতে সিদ্ধ হস্ত হয়ে উঠেছে এটাই দুঃখের।
একবিংশ শতাব্দীর ভারতবর্ষের এই নির্মম দুর্দশা লজ্জার ।
নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ক্ষমতা কি আমাদের আইনের নেই?
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা কি শুধু নিজের আখের গোছাতেই ব্যাস্ত?
নাকি আইন আছে কিন্তু অপরাধীর হাত আইনের হাতের থেকে লম্বা?
ধর্ষণের মত জঘণ্য অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি জনসমক্ষে হওয়া উচিত,
যাতে সমস্ত ধর্ষকের হৃৎপিন্ড কেঁপে ওঠে ভয়ে।
মাননীয় বুদ্ধিজীবীগণ আপনাদের উদ্দেশ্য একটা অনুরোধ -
আপনারা তো জঙ্গীর মৃত্যুতে অথবা পাত্থরবাজদের দুঃখে শোকাতুর হন-
মানবাধিকার হননের কথা বলেন এবং গণমাধ্যমে ভাষণ দেন,
দয়া করে নারী নির্যাতন বন্ধের জন্য এই সদিচ্ছাটা দেখিয়েন।
পরিশেষে বলতে চাই মহাশক্তির আরাধনা শুধু মূর্তিতে নয় বাস্তবে হোক,
হে জগত মাতৃকা সকল মানুষের শুভ চেতনার উন্মেষ ঘটাও।
এই অশ্বিনের পুন্য লগ্নে তোমার আগমনের প্রাক্কালে একটাই প্রার্থনা-
হে পরমেশ্বরী এই ধর্ষক রক্তবীজ দের শেষ কর মা।